ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রায় একই নামে আরেকটি সাইট হচ্ছে

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিসিসির আইডিয়া প্রকল্প নিবন্ধিত সাইট
ছবি: ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

ফ্রিল্যান্সারদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিসহ সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সাড়ে তিন বছর আগে একটি ‘প্ল্যাটফর্ম’ করে। এর দুই বছরের মাথায় আইসিটি বিভাগের আরেকটি সংস্থা প্রায় একই নামে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আরেকটি প্ল্যাটফর্ম করছে।

আইসিটি বিভাগের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের নভেম্বরে ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর জন্য আগেই ‘https://freelancers.gov.bd/’ নামে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) থেকে একটি ডোমেইন নেওয়া হয়। সাইটটির নিবন্ধন হয় আইসিটি বিভাগের সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) আইডিয়া প্রকল্পের পক্ষ থেকে, ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি। এর মেয়াদ ২০২৮ সালের ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত।

সরকারি হলেও সাইটটি পরিচালনা করছে ফ্রিল্যান্সারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস)। বিএফডিএসের ভাষ্য, তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিসিসিকে সাইটটি ‘উপহার’ হিসেবে করে দেওয়া হয়। মূলত ফ্রিল্যান্সারদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিসহ পরিচয়পত্র দেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই সাইটটি করা হয়। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও দেশে এখন সাড়ে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন।

বিএফডিএসের সভাপতি তানজীবা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরিচয়পত্রের মাধ্যমে প্রণোদনা, ব্যাংকিং সেবা, ঋণসুবিধা পাওয়া যায়। পরিচয়পত্র পেতে ‘freelancers.gov.bd’ সাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আবেদনের পর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে বিএফডিএস।

বিসিসির নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের সাইটটি তাঁরা পরিচালনা করেন না। তাঁদের ডেটা সেন্টারেও এটি হোস্ট করা নেই।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য প্রায় একই নামে শুধু একটি অক্ষর বাদ দিয়ে আইসিটি বিভাগের আরেক সংস্থা আইসিটি অধিদপ্তর একটি সাইট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বিটিসিএল থেকে ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি সাইটটির নিবন্ধন নিয়েছে। এর মেয়াদ ২০২৮ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।

বাস্তবায়নাধীন সাইটটির ঠিকানা হচ্ছে ‘freelancer.gov.bd’। অর্থাৎ এখানে ফ্রিল্যান্সার শব্দের শেষে ‘এস’ অক্ষরটি নেই। ২০ মে এখানে প্রবেশ করলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে লেখা দেখা যায়। তবে আজ বুধবার এখানে প্রবেশ করা যায়নি।

চলতি বছরের ১২ মার্চ দেওয়া আইসিটি অধিদপ্তরের একটি নির্দেশনা থেকে জানা যায়, তারা ফ্রিল্যান্সার ডেটাবেজ সিস্টেম তৈরি করবে। অধিদপ্তরের চলতি বছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) অংশ হিসেবে ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনায় এটি তৈরি করা হবে।

ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আইসিটি অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন সাইট। ছবিটি ২০ মে নেওয়া হয়।

আইসিটি অধিদপ্তর বলেছে, তাদের বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নাধীন ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষিত ফ্রিল্যান্সারসহ দেশের অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের একটি প্ল্যাটফর্ম বা ডেটাবেজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সব ফ্রিল্যান্সারদের তথ্য সহজেই প্রদান করা যাবে। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সারদের একটি অনলাইনভিত্তিক কমিউনিটি তৈরি হবে। ফলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।

আইসিটি অধিদপ্তর যে প্রায় একই নামে আরেকটি সাইট বানাচ্ছে, তা জানে বিএফডিএস। তারা বলছে, যাঁরা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সার, তাঁদের নিবন্ধন কার্যক্রমের পাশাপাশি মেন্টর সাপোর্ট দিয়ে থাকে বিসিসির ‘অধীনস্থ’ সাইটটি। অন্যদিকে অধিদপ্তর যে সাইটটি করছে, সেটি যেকোনো ধরনের ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে যাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদের ডেটাবেজের জন্য হচ্ছে। বিএফডিএসের প্রত্যাশা, অধিদপ্তরের সাইটটির নাম পরিবর্তন হবে।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, অভ্যন্তরীণভাবেই সাইটটি তৈরি হচ্ছে। কোয়ালিটি টেস্টের পর তা চালু হবে। তাদের সাইটের নাম পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে দুটি সাইট একত্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনটি ভালো, সেই বিষয়টিসহ আরও কিছু যাচাই-বাছাইয়ের পর তা করা হতে পারে।

আইসিটি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, সরকারিভাবে একটি সাইট থাকা দরকার। যেহেতু তাঁদের অধীন সাইটটির কাজ চলছে, তাই পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয় বসে সিদ্ধান্ত নেবে কোনটি থাকবে।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডিনেট ও আই সোশ্যালের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী অনন্য রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের সুবিধার জন্য সরকারি পর্যায়ের একটি প্ল্যাটফর্ম থাকাই ভালো। এখন আইসিটি অধিদপ্তরও যেহেতু ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সাইট বানাচ্ছে, তাই মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কোনটাকে প্রাধান্য দেবে।