ডেঙ্গুতে মৃত্যু: ২২ বছরের রেকর্ড ছাড়াল ৯ মাস না পেরোতেই

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের বড় প্রাদুর্ভাব হয় ২০০০ সালে। সে বছর ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এর পর থেকে প্রতিবছরই দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। দেশে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৫৩ জন। আর এ বছরের শুরু থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৮৬৭ জনের।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় (গত মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে গতকাল সকাল আটটা) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি চলতি বছর ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। অবশ্য এর আগে ২ সেপ্টেম্বরও ডেঙ্গুতে ২১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এত মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ করেছে। এ অবস্থার পরও ডেঙ্গুকে কেন এখনো জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না, তা আমার বোধগম্য নয়।
মুশতাক হোসেন, জনস্বাস্থ্যবিদ

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ঢাকা শহরের ১০ জন ও ঢাকার বাইরের রোগী ১১ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে ৩ হাজার ১৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় ৮৫৭ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ২ হাজার ১৫৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১ লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৫ হাজার ৮৩৩ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ লাখ ৯৭৭ জন ভর্তি হন।

গত ২২ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর (২৮১ জন) রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বছর অনেক আগে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

গত ২২ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর (২৮১ জন) রেকর্ড হয়েছিল। চলতি বছর অনেক আগে সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের, ২০২১ সালে ১০৫ জনের। গত ২২ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ বছরেই ডেঙ্গুতে কমবেশি মৃত্যু দেখেছে দেশ। এবার মৃত্যুর রেকর্ড সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেল।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি ‍মৃত্যু ভীষণ কষ্টের। আমরা চাইব মৃত্যু শূন্যের কোটায় আসুক। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন সবার সহযোগিতা দরকার।’

এবার ডেঙ্গু যে বাড়বে, তা কিন্তু বছরের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা এডিস মশার লার্ভা বা শূককীট জরিপ করে। বছরের শুরুতে তারা জানিয়েছিল, এবার লার্ভার পরিমাণ যেকোনো সময়ের বেশি।

আরও পড়ুন

এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে বেশি। এবার হাসপাতালে মারা যাওয়া ডেঙ্গু রোগীর অর্ধেকের বেশি মারা গেছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক দিনের মধ্যে।

জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ করেছে। এ অবস্থার পরও ডেঙ্গুকে কেন এখনো জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না, তা আমার বোধগম্য নয়। সরকার যে কাজ করছে না, তা নয়। কিন্তু সমন্বিত কোনো উদ্যোগ দেখছি না। এখন মৃত্যু যদি কর্তৃপক্ষের গা সওয়া হয়ে যায়, তা হবে দুঃখজনক।’

আরও পড়ুন