রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ, ‘ডেলিভারি’ হয়ে যাবে পথেই

রাস্তাঘাটের দুরবস্থা নিয়ে সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুজন সংসদ সদস্যের ক্ষোভ।

জাতীয় সংসদ ভবনফাইল ছবি

নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাটের দুরবস্থা নিয়ে আজ রোববার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দুজন সংসদ সদস্য। তাঁদের মধ্যে সাতক্ষীরা-২ আসনের (সাতক্ষীরা সদর) সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান তাঁর নির্বাচনী এলাকার একটি সড়কের কথা উল্লেখ করে বলেন, অবস্থা এতটাই খারাপ যে কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী ওই রাস্তায় চলাচল করলে পথেই ‘ডেলিভারি’ (সন্তান প্রসব) হয়ে যাবে।

অন্যদিকে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা ও দশমিনা) আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেছেন, রাস্তাঘাটের খারাপ অবস্থার কারণে ভোট চাইতে গিয়ে তাঁকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আজ প্রথমবারের মতো প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান সম্পূরক প্রশ্নে নিজ এলাকার একটি সড়কের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, ডিজিটাল যুগেও যেন তাঁরা আদিম যুগে আছেন। সাতক্ষীরা শহরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে ফুড অফিস, সমবায় অফিস, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যেতে যে সড়ক ব্যবহার করতে হয়, তার দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সড়কটি দিয়ে কোনো মানুষ যদি আসে, কোনো ডেলিভারি মহিলা আসে, রাস্তায় ডেলিভারি হয়ে যাবে।’
এর জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, যে রাস্তাগুলো অতীব জরুরি, যেখানে জনগণের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে, সেসব রাস্তা সংস্কারের জন্য টাকা দ্রুত ছাড় করা হবে।

প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু অনেকগুলো কাজ অর্ধসমাপ্ত হয়ে আছে। এখন অবস্থাটা এমন হয়েছে যে রাস্তার কাজ না ধরলেই ভালো হতো। কাজগুলো থেমে থাকার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও হচ্ছে না। নির্বাচনের সময় ভোট চাইতে গিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। তিনি এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম অনেক গুণ বেড়েছে। এর ফলে ঠিকাদারেরা কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। বাস্তবতা উপলব্ধি করে উপকরণের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু এর আগে যেসব ঠিকাদার কাজ করেছিলেন, তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে কাজগুলো তাঁরা বাস্তবায়ন করবেন না, সেগুলো বাদ দিয়ে নতুন টেন্ডার (দরপত্র) করা হবে। এ প্রক্রিয়াটি করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় বরাদ্দ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালন বাজেটের আওতায় চলতি অর্থবছরে ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচার খাতে সিটি করপোরেশনগুলোর অনুকূলে ৪০ কোটি ও পৌরসভাগুলোর অনুকূলে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় সারা দেশে মশা নিধনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, ২০২১ সালে ‘ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে জাতীয় নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্দেশিকায় সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সব অংশীজনের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা কমিটির জরুরি সভা আয়োজনসহ এডিস মশা নিধনে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

১০ লাখ ৬৫ হাজার আর্সেনিকমুক্ত পানির উৎস স্থাপন করা হবে

নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. মামুনুর রশীদের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ ৬৫ হাজার আর্সেনিক মুক্ত পানির উৎস স্থাপন করা হবে। এ ক্ষেত্রে গভীর নলকূপ ছাড়াও পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহব্যবস্থা, বৃষ্টির পানির সংরক্ষণব্যবস্থা এবং পুকুর খনন ও পুনঃখননসহ সৌরচালিত ‘পন্ড স্যান্ড ফিল্টার’ স্থাপন করা হবে। বর্তমানে যারা আর্সেনিক ঝুঁকিতে রয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের হার শতকরা ৫-৬ ভাগে নামে আসবে।

সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের যৌথ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ ভাগ আর্সেনিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে।