অমর সাহা দেশ ছেড়ে গেছেন, কিন্তু আসলে যাননি

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে সোমবার বিকেলে চারটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

‘মানুষ চিরদিন স্মৃতিকাতরতার মধ্যে থাকে। অমর সাহা দেশ ছেড়ে গেছেন, কিন্তু আসলে যাননি। অবিচ্ছেদ্য জাদুময়তা হচ্ছে মানুষের প্রাণের টান। তাই অমর সাহা তাঁর কর্মময় জীবনের সব সূত্রেই যুক্ত আছেন বাংলাদেশের সঙ্গে।’ সোমবার এক প্রকশনা অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর কলকাতা প্রতিনিধি অমর সাহাকে নিয়ে কথাগুলো বললেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে বিকেলে ‘প্রথম আলোয় ২৫ বছর এবং পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০০৩’, ‘সংবাদ থেকে ভোরের কাগজে কলকাতা’, ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বঙ্গবন্ধু’ এবং ‘মুহাইমিন আমার’—এ চারটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

‘প্রথম আলোয় ২৫ বছর এবং পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন ২০০৩’ এবং ‘সংবাদ থেকে ভোরের কাগজে কলকাতা’ বই দুটির লেখক অমর সাহা। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশেরই মানুষ। প্রথম আলোর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশে এসেছি। কলকাতার জীবন শুরু হয়েছিল সংবাদ পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে। সেখান থেকে ভোরের কাগজ, তারপর প্রথম আলোয় এসেছি। সে–ও ২৫ বছর হয়ে গেল।’  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে বাংলা ভাষার বয়স ও ভাষার সঙ্গে ভৌগোলিক অবস্থার যোগসূত্রের কথা। সাংবাদিকতা ও সৃজনশীলতা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম বড় পত্রিকা প্রথম আলো, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিবেদন যে সৃজনশীলতা দিয়ে লেখা যায়, তা এই পত্রিকায় প্রকাশিত অমর সাহার লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইটি থেকে বোঝা যায়।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বরেণ্য জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ বলেন, ‘পৃথিবীতে যত কিছু আছে, এর মধ্যে বই আমার সবচেয়ে প্রিয়।’ লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘বইয়ের চেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু পৃথিবীতে কিছু নেই।’ এ সময় জুয়েল আইচ অমর সাহা ও তাঁর পিরোজপুরে শৈশবের স্মৃতিকথা তুলে ধরেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘বাংলাদেশে লেখালেখির জগৎ অনেক বিস্তৃত। এর মধ্যে কয়েকটি ভালো বই যুক্ত হলো।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক অমর সাহাকে তাঁর গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর ছেড়ে, বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। এই গল্পের পেছনে অনেক বেদনা আছে।’ অনুষ্ঠানে শ্যামল দত্ত ‘আমার একটি ভিসা নীতি চাই’ শিরোনামের একটি কবিতা পড়ে শোনান।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিজন শংকর সাঁওজাল। তিনি বলেন, ‘রুচির সংস্কৃতি তৈরি হয় বই থেকে। এক সময় আমার বাবা বিদেশ থেকে চিঠি লিখতেন। আমার মা বারবার পড়তে বলতেন সেই চিঠি। সেই চিঠিগুলোর স্মৃতি এখন বইয়ের মতো।’ এ সময় অমর সাহার সঙ্গে সত্তরের দশক থেকে পরিচয়ের স্মৃতিচারণা করেন শংকর সাঁওজাল।

বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ও গবেষক সাহেদ মন্তাজ বলেন, অমর সাহার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা এবং পশ্চিম বাংলার নির্বাচন কেন্দ্র করে আর্থসামাজিক পরিস্থিতির চিত্র উঠে এসেছে তাঁর বই দুটিতে। প্রকাশনা উৎসবের বইগুলো নিয়ে অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কাদের বলেন, ১১টি খণ্ডে প্রকাশিত অমর সাহার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বইগুলো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পড়ানো উচিত।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিক ও কবি বজলুর রায়হান বর্তমানে বই প্রকাশনার বিভিন্ন সংকট নিয়ে কথা বলেন। অমর প্রকাশনী আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন প্রকৌশলী সুনির্মল মন্ডল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভি চৌধুরীসহ অনেকে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক জাকির হোসেন।