চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম ছাত্র জোটের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচির লিফলেট বিতরণ করার সময় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
ছাত্রলীগের যে নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন, তাঁরা শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের কর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। উপপক্ষটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীদের অভিযোগ, সরকারের পদত্যাগসহ ছয় দাবিতে আগামী শুক্রবার নগরের লালদীঘির মাঠে বিভাগীয় সমাবেশ করবেন তাঁরা। আজ বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাঁরা এ–সম্পর্কিত লিফলেট বিতরণ করছিলেন। দুপুর ১২টায় বিজ্ঞান অনুষদের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা প্রথমে তাঁদের বাধা দেন। হাত থেকে লিফলেট ছিনিয়ে নিয়ে গালাগাল করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এসে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাঁদের প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যান।
জোটের নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, প্রক্টর কার্যালয়ে নেওয়ার পরও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অসদাচরণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার ও ছাত্রলীগ একই সুরে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। অনুমতি না নিয়ে কেন ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করেছেন, এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাঁরা প্রক্টর কার্যালয় থেকে ছাড়া পান। তবে ওই কার্যালয়ের সামনেই ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা এক দফা তাঁদের মারধর করেছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাম ধারার আট ছাত্রসংগঠন নিয়ে গঠিত হয় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এই জোটে এখন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ (নজির-রাগীব), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন এবং বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রয়েছে। বাসদ ছাত্র ফ্রন্ট নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতে চার সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
হামলার বিষয়ে জানতে কথা হয় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চট্টগ্রামের সভাপতি অ্যানি চৌধুরী, পিসিপির সাধারণ সম্পাদক রোনাল চাকমা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের চট্টগ্রাম নগরের সহসভাপতি রিপা মজুমদারের সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে লিফলেট কেড়ে নিয়ে তাঁদের গালাগাল করেছেন। পরে প্রক্টর কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের কয়েকজন নেতা–কর্মীকে চড়থাপ্পড়, কিল–ঘুষি ও লাথি দিয়েছেন।
শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ বর্তমানে দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগের নেতৃত্ব দেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব ও আরেকটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। প্রথম পক্ষটি আজ ছাত্র জোটের ওপর হামলা চালিয়েছে।
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, বাম সংগঠনগুলো যে ছয় দাবি জানিয়েছে, এর মধ্যে তিনটি দাবি রাষ্ট্র ও দেশবিরোধী। লিফলেটগুলোতে আওয়ামী সরকারকে ফ্যাসিবাদী সরকার উল্লেখ করে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে, ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানানো হয়েছে। তাঁরা এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে হামলা করেননি। তাঁদের কয়েকজন জুনিয়র হয়তো বাম জোটের কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, যেসব সংগঠনের নাম দিয়ে ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছিল, এসব সংগঠনের কার্যক্রম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে এসে অনুমতি না নিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছিল, এটি অন্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়মশৃঙ্খলা রয়েছে।
ছাত্রলীগের হামলা ও প্রক্টর কার্যালয়ে বাম জোটের নেতা–কর্মীদের নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, হামলার ঘটনা হয়েছে কি না, তিনি জানেন না। ছাত্ররা ধাওয়া দিয়েছেন, এমন খবরে তিনি প্রক্টরিয়াল বডি পাঠিয়েছিলেন। যাতে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হেনস্তার শিকার না হন।
যে ছয় দাবিতে লিফলেট
ছাত্র জোটের নেতারা যে ছয় দাবিতে লিফলেট বিতরণ করেছেন, সেগুলো হলো ১. সরকারের পদত্যাগ; ২. সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক এবং একই ধারার শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিল; ৩. কাগজ-কলমসহ শিক্ষা উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমানো; ৪.শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারত্ব বন্ধ করা ও অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া; ৫. সাইবার নিরাপত্তা আইন ও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ বাতিল, শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার দেওয়া; ৬. রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম-খুন-নির্যাতন এবং বিনা বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন বন্ধ করা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।