মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার এই হ্যাচারিতে খুন হন রুবেল
ছবি: প্রথম আলো

‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টায় অবিশ্বাস্য তদন্ত’ ঘিরে আলোচনায় আসা মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের মো. রুবেল হত্যা মামলাটি পুনরায় তদন্ত করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাকসুদুর রহমানের আদালতে কেস ডকেট উপস্থাপনের পর শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত

শুনানিকালে তদন্ত কর্মকর্তার উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘বেশি স্মার্টনেস দেখাবেন না।…কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলেন, কোর্টকে কী মনে করেন আপনারা? কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’ পরে পুলিশ সুপারের নিচে নন—এমন একজন কর্মকর্তা দিয়ে ৬০ দিনের এই মামলার পুনঃ তদন্ত করতে পিবিআইপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরবর্তী আদেশের জন্য ৫ জুন দিন রেখেছেন আদালত।

‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে গত ২ মার্চ প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা গত ৫ মার্চ হাইকোর্টে আবেদনটি করেন। সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে খালাতো ভাই–বোন। আর নিহত রুবেল সোহেলের ভগ্নিপতি। আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৪ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাকসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ সোমবার আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এ অনুসারে কেস ডকেটসহ তিনি আদালতে হাজির হন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি ও অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।

পরে আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান আসামি সোহেলকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১১টার সময় আদালতে নিয়ে যান। একই সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজন সাক্ষী নেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে কেস ডায়েরিতে। মাত্র ২ ঘণ্টা ১০ মিনিটে দুটি স্থানে ১৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন। সে হিসাবে ১০ মিনিটে একজনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যা অসম্ভব। আদালতের সামনে মিথ্যা তথ্য ও ত্রুটিযুক্ত তদন্তের জন্য পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করার জন্য মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের একটি হ্যাচারিতে খুন হন মো. রুবেল (২২)। পরদিন তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেল নামের একজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মরদেহ রাত দেড়টায় উদ্ধারের পর সুরতহাল করেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। এরপর মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মানচিত্র তৈরি, সাক্ষ্য গ্রহণসহ একে একে অন্তত ৯টি ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ মাত্র ২২ ঘণ্টায়। পরবর্তী ২০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায়সহ তদন্তের সব প্রক্রিয়া শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অর্থাৎ মরদেহ উদ্ধার থেকে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে পুলিশের সময় লেগেছে মাত্র ৪২ ঘণ্টা। একটি খুনের মামলার তদন্তে এমন ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায়।