আনোয়ারুল হত্যা: আক্তারুজ্জামানসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহের নির্দেশ

মো. আক্তারুজ্জামানছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. আক্তারুজ্জামানসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য সরবরাহ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ সোমবার এই আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপ) তাপস কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যা মামলায় জড়িত ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করার আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

এর ফলে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশকে সরবরাহ করবে।

আলোচিত এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমান আজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিচ্ছেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দিচ্ছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত শুক্রবার শিলাস্তি রহমানসহ তিনজনকে আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আদালত তাঁদের প্রত্যেককে আবার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ শিলাস্তি রহমানকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করে ডিবি। পরে বিকেলে এ হত্যা মামলায় স্বীকারোক্তি দেওয়া শুরু করেন শিলাস্তি রহমান।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম
ফাইল ছবি

ঢাকায় গ্রেপ্তার মামলার অপর আসামিরা হলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ (প্রকৃত নাম শিমুল ভূঁইয়া) ও ফয়সাল আলী। এই দুই আসামি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যান। পরদিন কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে তিনি খুন হন। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ করে কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশকে এ তথ্য জানায়। এরপর ঢাকা থেকে শিমুল ভূঁইয়াসহ এই তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা এবং তাঁর লাশ গুম করার ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পায় পুলিশ। তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনোয়ারুলকে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা করে ব্যাগে ভরে সরানো হয়েছে। এর কিছু অংশ কলকাতার একটি খালে ফেলা হয়েছে।

এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ২২ মে তাঁর বাবাকে অপহরণ করার অভিযোগ এনে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।

তদন্ত–সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিনের পরিকল্পনায় কলকাতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুজ্জামানকে হত্যা করা হয়। এ জন্য আক্তারুজ্জামান ৫ কোটি টাকায় খুনিদের ভাড়া করেন। এই হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শিমুল ভূঁইয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। তিনি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান।

এ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশে এই তিন আসামি ছাড়াও কলকাতায় জিহাদ হাওলাদার নামে একজন গ্রেপ্তার এবং নেপালে মো. সিয়াম হোসেন নামে একজন আটক হয়েছেন। কলকাতায় ওই হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহখানেকের মধ্যে আক্তারুজ্জামান ঢাকা থেকে প্রথমে নেপালে যান। সেখান থেকে তিনি দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে তদন্ত–সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।