উপজেলা ভোট ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১০

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে পুলিশের পাহারাছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্র দখল নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার রেশ ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাশে এ সংঘর্ষ হয়। এর আগে বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে নির্বাচনী কেন্দ্র দখল নিয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখমের ঘটনাটি ঘটে। এর জেরেই সংগঠনটির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সংঘর্ষ শুরুর পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ভোটকেন্দ্র–সংলগ্ন এলাকা থেকে চারটি রামদা উদ্ধার করে প্রক্টরিয়াল বডি।

কুপিয়ে জখম হওয়া ছাত্রলীগের ওই কর্মীর নাম সালাউদ্দিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিজয় উপপক্ষের কর্মী। তাঁকে কুপিয়ে জখম করা ব্যক্তিরাও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তাঁরা আরেক উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) নেতা-কর্মী বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনে সিএফসির নেতা-কর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন চৌধুরীর হয়ে কাজ করছেন। তিনি চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে বিজয় উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল আলমকে সমর্থন দিচ্ছিলেন। চেয়ারম্যান পদে তাঁর প্রতীক মোটরসাইকেল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, আজ দুপুর থেকেই কেন্দ্র দখলের উদ্দেশ্যে সিএফসির নেতা-কর্মীরা ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় ভিড় করছিলেন। পরে আড়াইটার দিকে সালাউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন নেতা-কর্মী ওই কেন্দ্রের দিকে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে সালাউদ্দিনকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে।

কুপিয়ে জখম করার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে বিজয় উপপক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিজয়ের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল ও এ এফ রহমান হল থেকে লাঠিসোঁটা ও রামদা নিয়ে শহীদ আব্দুর রব হলের দিকে যান। ওই হলে সিএফসির নেতা-কর্মীরা অবস্থান করেন। বিজয়ের নেতা–কর্মীরা সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে গেলেই সিএফসির নেতা–কর্মীরা শহীদ আব্দুর রব হল থেকে লাঠিসোঁটা-রামদা নিয়ে বের হয়ে ধাওয়া দেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন আহত হন।

‘সংগঠন এর দায় নেবে না’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। মারধর, সংঘর্ষ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ কমিটি বিলুপ্ত করেছিল কেন্দ্র। এখানকার নেতা-কর্মীরা দুটি অংশে বিভক্ত। একটি পক্ষ নিজেদের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং আরেকটি পক্ষ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এ দুটি পক্ষ আবার ১১টি উপপক্ষে বিভক্ত। বিবদমান সিএফসি ও বিজয়—দুটি পক্ষই শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয়।

জানতে চাইলে বিজয় উপপক্ষের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস প্রথম আলোকে বলেন, সিএফসির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্র দখল করার উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছিলেন। সালাউদ্দিন বাধা দেওয়ায় তাঁকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

তবে নিজ উপপক্ষের নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন মোহাম্মদ ইলিয়াস। তিনি বলেন, তাঁদের কেউ এসবে জড়িত ছিল না। যেহেতু ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রটি হলের পাশে, তাই কয়েকজন এমনিতেই গিয়েছিলেন। কোপানোর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে জুনিয়ররা উত্তেজিত হয়ে ধাওয়া দিয়েছে।

সিএফসির নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, মারধরে কে জড়িত, তিনি জানেন না। নির্বাচনের কেন্দ্রে যারা গেছে, তারা নিজের ইচ্ছাতেই গেছে। সংগঠন এর দায় নেবে না। সংগঠন কাউকে যেতে বলেনি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ অহিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক ঝামেলা থেকে কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্যই এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর পরবর্তী সময়ে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।