চট্টগ্রাম ওয়াসার সংযোগ ২০ বছর আগে, নিয়মিত বিল দিয়ে পানি পাননি এক দিনও

চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম বাঘঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইউসুফ
ছবি: প্রথম আলো

ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ ইউসুফ চট্টগ্রাম নগরের পশ্চিম বাঘঘোনা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর তিনতলা বাড়ি। তিনি স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে থাকেন সে বাড়িতে। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এসে তিনি জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি পানি পান না। অথচ প্রতি মাসেই লাইন চার্জ বাবদ ৬৪২ টাকা বিল পরিশোধ করছেন।

অবশ্য মোহাম্মদ ইউসুফ একা নন, নগরের পশ্চিম বাঘঘোনা ও মতিঝরনা এলাকার অন্তত ১৫ জন বাসিন্দা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহর কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা কেউ ১ বছর, কেউ ৯ মাস ধরে পানি পাচ্ছেন না। অথচ সবাই প্রতি মাসে ওয়াসার লাইন চার্জ বাবদ ৬৪২ টাকা পরিশোধ করছেন। এ নিয়ে সংস্থার এমডির কাছে ক্ষোভ ঝাড়েন।

এ সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে বসা ছিলেন সংস্থাটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রকৌশল) বিষ্ণু কুমার দে, প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড প্রোডাকশন) মো. নুরুল আমিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্ল্যানিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম। আরও ছিলেন ওয়াসার সচিব শাহিদা ফাতেমা চৌধুরী।

মোহাম্মদ ইউসুফ ওয়াসার এমডিকে বলেন, ‘স্যার, আমি ২০ বছর ধরে ৬৪২ টাকা করে পরিশোধ করি। কিন্তু এক ফোঁটা পানিও পাই না। পানি পাব এ আশায় আমি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি নাই।’ এরপর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম ইউসুফকে বলেন, ‘২০ বছর ধরে কীভাবে পানি পান না? আমি নিজেই ওই এলাকায় গিয়ে পানি দিয়েছি।’ মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘আমার বাসাটা উঁচু এলাকায়। ওখানে পানি পৌঁছায় না। আমি মিথ্যা কথা বলছি না।’ পরে এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আপনি সংযোগ কেন রেখেছেন? কেটে দেননি কেন?’ জবাবে মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘স্যার, আমি অনেক কষ্ট করে ওয়াসার লাইন নিয়েছি। আর যাঁরা লাইন কাটবেন, তাঁদের কাছ থেকে আবার সংযোগ নিতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হবে, এ ভয়ে লাইন কাটি নাই।’ এমডি বলেন, লাইন নিতে এত টাকা লাগে না।

মতিঝরনা ও বাঘঘোনার বাসিন্দারা এমডিকে বলেন, এই দুই এলাকায় পানির কষ্টে আছেন গ্রাহকেরা। কেউ পানি পান না। পুরোনো পাইপে পানি আসত না। বছরখানেক আগে নতুন পাইপ বসানো হয়েছে। এখনো কোনো পানি আসছে না। বেশ কয়েকবার ওয়াসাতে এসে ধরনা দিলেও লাভ হয়নি। অথচ প্রতি মাসে লাইন চার্জ বাবদ ৬৪২ টাকা করে পরিশোধ করে আসছেন গ্রাহকেরা।

বাসিন্দাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, মতিঝরনা এলাকায় নতুন কিছু সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর বাঘঘোনায় কিছু সংযোগ ঠিকঠাক করা হচ্ছে। ওখানে পানির চাপ (প্রেসার টেস্ট) মাপতে হবে। এরপর এমডি এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ১০ দিনের মধ্যে পশ্চিম বাঘঘোনা ও দুই মাসের মধ্যে মতিঝরনায় পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সংস্থার প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) অধীন চট্টগ্রাম নগরে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। সংযোগ দেওয়ার কাজও প্রায় শেষের দিকে। তবে এখনো বেশ কিছু গ্রাহক সংযোগ পাননি। এই দুই এলাকার বাসিন্দা শেখ আহমদ, শাহ আলম, মো. আজম, মোহাম্মদ আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, পুরোনো লাইনে পানি না পাওয়ার পর তাঁদের দুই এলাকায় কয়েক শ গ্রাহক নতুন পাইপলাইনের সংযোগ নিয়েছেন। কিন্তু এখনো কোনো পানি পাচ্ছেন না। অথচ মাসে মাসে লাইন চার্জ বাবদ প্রায় সাড়ে ছয় শ টাকা বিল দিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে কয়েকবার ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে জানালেও লাভ হয়নি। ২০ বছর ধরে মোহাম্মদ ইউসুফের পানি না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে এই বাসিন্দারা বলেন, ‘আসলে ২০ বছরই মোহাম্মদ ইউসুফ পানি পাচ্ছেন না। এটি সত্য।’ আর মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে ও কিনে তিনি দিন পার করছেন। পানি পেলে ভোগান্তিটা কমে যেত।