কালুরঘাট সেতু সংস্কার শুরু, ফেরি চালু হলেও গাড়ি পারাপারে ভোগান্তি
চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেল সেতুর সংস্কারকাজ আজ মঙ্গলবার বিকেলে শুরু হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টায় সেতুতে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিকল্প হিসেবে কর্ণফুলী নদীতে ফেরি চালু করা হয়েছে। তবে দুটি ফেরি চলাচলের কথা থাকলেও প্রথম দিন বিকেল পর্যন্ত চলেছে মাত্র একটি ফেরি। এতে নদী পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
সংস্কারকাজ শুরুর পর দুটি ফেরি চলাচল করবে। এমনটি জানিয়েছিলেন সড়ক ও জনপথের (সওজ) প্রকৌশলীরা। কিন্তু মঙ্গলবার চলছে মাত্র একটি। এতে ফেরিঘাট এলাকায় জট সৃষ্টি হয়।
আজ বেলা দেড়টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ফেরিঘাটের সামনে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির দীর্ঘ সারি। এর মধ্যে ছিল মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, পিকআপ, টেম্পো, মাইক্রোবাস ইত্যাদি। ফেরিঘাট থেকে মূল সড়ক (আরাকান সড়ক) পর্যন্ত গাড়ির লম্বা সারি। এর মধ্যে অনেক গাড়ি বেলা ১১টা থেকে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। অটোরিকশা, টেম্পো ও মাইক্রোবাসগুলোতেও ছিল যাত্রী। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরিতে ওঠার সুযোগ হয় কারও কারও।
জোয়ারের পানিতে রাস্তা থেকে ফেরিতে ওঠার পাটাতন ডুবে যায়। ফলে পানি মাড়িয়ে ফেরিতে উঠতে হয়েছে যাত্রী ও চালকদের।
চট্টগ্রাম নগর প্রান্তে ফেরির অপেক্ষায় থাকা অটোরিকশাচালক মোজাম্মেল হোসেন, জসিম উদ্দিন ও পিকআপচালক মো. আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা হয়। বেলা দুইটার দিকে তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রী ও পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম নগর থেকে বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন। সেতুতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এখন ফেরি দিয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছেন। কখন ফেরিতে উঠবেন, কখন যাবেন, তার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। সময় বেশি লাগার কারণে আগের মতো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।
ফেরির জন্য বসতে বসতে বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছিলেন রেশমি আক্তার। বোয়ালখালীর শাকপুরা এলাকার এই বাসিন্দা বলেন, সকালে চট্টগ্রাম নগরে গিয়েছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এরপর বাড়ি ফিরতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। দুই ঘণ্টা ধরে বসে আছেন। কিন্তু নদী পার হতে পারেননি।
কর্ণফুলী নদীর নগর প্রান্ত থেকে বেলা পৌনে দুইটায় একটি ফেরি ছেড়ে যায়। সেটি বোয়ালখালী উপজেলা প্রান্তে পৌঁছে দুইটায়। যাত্রী আর গাড়ি নিয়ে সেটি নগর প্রান্তে ফেরত আসে বেলা আড়াইটায়।
ফেরি পার হয়ে বোয়ালখালী থেকে নগর প্রান্তে আসা পিকআপচালক আবদুল্লাহ মামুন বলেন, সকাল ১০টা ২০ মিনিটে গাড়ি নিয়ে ফেরিঘাটে এসেছিলেন। কিন্তু ফেরি দিয়ে নদী পার হয়ে নগর প্রান্তের ঘাটে এসেছেন বেলা আড়াইটায়। এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করা খুব কষ্টের। সেতু যখন চালু ছিল, তখন ২০-৩০ মিনিটে নদী পার হয়ে যেতেন।
আগামীকাল বুধবার থেকে সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে চলাচলের সুযোগও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান রেলওয়ের এক প্রকৌশলী। তিনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর বিভিন্ন অংশে কাজ করবে। তাই পথচারীদের চলাচলের সুযোগ রাখা যাবে না।
সওজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাজিম উদ্দিন কালুরঘাটের ফেরিঘাট প্রান্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তিনটি ফেরির ব্যবস্থা করেছেন। প্রথম দিন থেকেই দুটি চলাচল করত। ফেরিচালকদের কাছে এই রুট নতুন। আবার ৩ নম্বর সংকেত থাকায় নদী উত্তাল। তাই প্রথম দিন একটি ফেরি চলাচল করেছে।
রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩১ সালে কালুরঘাট রেলসেতু নির্মিত হয়। ১৯৬২ সালে সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। আগামী সেপ্টেম্বরে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্রুতগতিতে রেল চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় ৯২ বছরের পুরোনো কালুরঘাট সেতু। এই সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। এখন সংস্কার করে গতি ৬০ কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে।
কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু দিয়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাঙ্গুনিয়ার একটি অংশের মানুষ চট্টগ্রাম নগরে আসা-যাওয়া করেন। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করে না। বন্ধ হওয়ার আগে এই সেতু দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টেম্পো, ছোট পিকআপ, ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার), মাইক্রোবাস চলাচল করত।