তথ্যের সহজলভ্যতা ও আইনি ফাঁকের কারণে সাইবার সহিংসতা বাড়ছে

সিরডাপের এ টি এম শামসুল হক মিলনায়তনে সাইবার অপরাধ নিয়ে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ঢাকা, ২ ডিসেম্বর
ছবি: সংগৃহীত

ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্যের সহজলভ্যতা, ব্যবহারকারীর অজ্ঞতা এবং প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে আইনি পদক্ষেপের ফাঁকের কারণে দেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। নারীর প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে সাইবার অপরাধ নতুন সংযোজন।

গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইন ব্যবহারকারী নারীদের বড় একটি অংশ সাইবার পরিসরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর) পালন উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।  

মহিলা পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপের এ টি এম শামসুল হক মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা: বাস্তবতা ও করণীয়’ শিরোনামের এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সাইবার-দুনিয়া একটি মুক্ত জায়গা। সেখানে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হবে। ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করা। তাদের ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মেধাবিকাশের সুযোগ দিতে হবে।

শ্যাম সুন্দর সিকদার আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের আইনি কাঠামো এ দেশে নেই। এরপরও বিটিআরসির উদ্যোগে ৩৫ হাজার আপত্তিকর আধেয় ফেসবুক থেকে আলোচনার মাধ্যমে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইবার ট্রাইব্যুনাল, ঢাকার বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) এ এম জুলফিকার হায়াত বলেন, সাইবার পরিসরে বেশির ভাগ নারী প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাবে ভুক্তভোগী হন। অপরাধ প্রমাণের জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ না থাকার কারণে অপরাধী মুক্তি পেয়ে যান। সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে একাধিক সিম কার্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং টিকটক, ইমো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনি নীতিমালা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।

বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপমহাপরিদর্শক (সুরক্ষা ও প্রটোকল) আমেনা বেগম বলেন, মাঠপর্যায়ে ৬৫৯টি থানা আছে। এসব থানার তদন্ত কর্মকর্তাদের সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ফলে ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সরকারি-বেসরকারি ও তরুণদের সমন্বিত চেষ্টায় সাইবার অপরাধ মোকাবিলা করা যাবে।

মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, ৫৩ বছর ধরে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করতে গিয়ে দেখা গেছে, নারীর অগ্রগতির পথে মূল বাধা নারীর প্রতি সহিংসতা। সহিংসতার ক্ষেত্রে নতুন ধরন সাইবার সহিংসতা।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২২ সালে ৫১৪ জন অনলাইন ব্যবহারকারীর ওপর পরিচালিত একশনএইড বাংলাদেশের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৪ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার শিকার হন,Ñযা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি।

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নোভা আহমেদ, সাইবার টিনসের প্রতিষ্ঠাতা সাদাত রহমান।

আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের সভাপতি ও সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দা কামরুন জাহান, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার, সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ, বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের বক্সার তামান্না হক, নিঃসঙ্কোচ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ফাহিম, শিশু কিশোর ক্রিকেট উইমেনস একাডেমির দল ব্যবস্থাপক লামিয়া জালাল প্রমুখ।