আত্মোপলব্ধির দিন

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

প্রতিবছর ১৫ আগস্ট কিছু সত্যের সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয়। আমরা দেখি, যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, অনেক শক্তি-পরাশক্তির প্রতিরোধ সত্ত্বেও বিশ্বের মানচিত্রে একটা সম্মানের জায়গা করে নিল, সেই দেশেরই কিছু মানুষ কী এক পাশবিক নিষ্ঠুরতায় তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করল। সেই হত্যাকারীরা এরপর দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেল, কয়েকজন এখনো তা–ই রয়ে গেছে।

কোনো কোনো রাজনীতিবিদ তাদের ‘সূর্যসন্তান’ বলে আখ্যায়িত করলেন, ’৭৫–পরবর্তী সরকার তাদের নানান দূতাবাসে চাকরি দিল। একসময় আমরা দেখলাম ১৫ আগস্টকে শুধু তারা এবং তাদের প্রশংসাকারী রাজনীতিবিদেরাই নন, বুদ্ধিজীবী–সমাজ বলে যে সমষ্টিকে মানুষ মান্য করে, সেই সমাজের একটি অংশ বেশ একটা বৈধতা দিয়ে দিল, যেন ১৫ আগস্টের অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নয়।

আরেকটি সত্য যত দিন গেল, তত স্পষ্ট হলো। ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই হত্যা করা হয়নি, একাত্তরে বাঙালি জাতি যা অর্জন করেছিল, যার একটা কাঠামোগত রূপ বাংলাদেশের সংবিধানে উৎকীর্ণ হয়েছিল এবং যার ভাবনাগত একটা রূপ আমাদের শুভচিন্তা ও মানবিকতার বিকাশে প্রয়োজনীয় ছিল, সেসবকেও মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হলো। সংবিধান আক্রান্ত হলো, মৌলিক অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার অখণ্ডতা হারাল।

সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রতা ফিরে এল। পাকিস্তানের ভাবধারার প্রত্যাবর্তন ঘটল। যে পাকিস্তানকে একাত্তরের বিজয় দিবসে আমরা অতীতে সমর্পণ করেছিলাম, তা যে শুধু বর্তমানেই ফিরে এল, তা নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকেও তার ডালপালা ছড়িয়ে দিল। এখন, প্রায় ৫০ বছর পর, আমাদের রাজনীতির একটা অঞ্চল তার আগ্রাসী দখলে চলে গেছে এবং শুধু রাজনীতি নয়, আমাদের সংস্কৃতির, এমনকি প্রতিদিনের ডিসকোর্সের ওপর তার প্রভাব পড়ছে।

এই সত্যই পঁচাত্তরের ৩ নভেম্বর আমরা নতুন করে উপলব্ধি করেছিলাম। জাতীয় চার নেতা বলে যাঁদের আমরা সম্মান জানাই, যাঁরা ছিলেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশক, তাঁদেরও কারাগারের তথাকথিত সুরক্ষাবলয়ে একই পাশবিকতায় হত্যা করা হলে আমাদের বুঝতে বাকি রইল না, ১৫ আগস্টের নিশানা কী ছিল। নিশানা শুধু বঙ্গবন্ধু ছিলেন না, ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়ে সবচেয়ে বিক্ষুব্ধ পক্ষ ছিল পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু এবং চার নেতাকে যারা হত্যা করল, তারা পাকিস্তানের হয়ে সেই ক্ষোভ মেটাল। তারা মানসিকভাবে পাকিস্তানেই সমর্পিত ছিল, পাকিস্তানি ভাবধারাই ছিল তাদের আরাধ্য।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টকে বৈধতা দেওয়া বুদ্ধিজীবীরা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাকে দায়ী করেন, যেমন ১৯৭৩ সালের নির্বাচন, যে নির্বাচনে বিরোধী দল বলে কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি আত্মপ্রকাশ করেনি। ১৯৭৪-এ উত্তরবঙ্গে যে দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি হয়, তার উদাহরণ তাঁরা টানেন। বাকশাল সৃষ্টিকে মূল একটি কারণ হিসেবে তঁারা দেখান।

একাত্তরের পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল আকাশসমান, একটি সদ্য স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য যা খুবই স্বাভাবিক। এ জন্য এসব ঘটনা, ত্রুটি-বিচ্যুতিতে তাঁরা হতাশ হন। তখন যেসব বামপন্থী দল ছিল, তারাও প্রতিবাদী হয়। তবে ধ্বংস হওয়া অর্থনীতি এবং অবকাঠামো, বিপর্যস্ত যোগাযোগব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ এবং অচল চট্টগ্রাম বন্দর যেসব চ্যালেঞ্জ সরকারকে ছুড়ে দিয়েছিল, সেসব মোকাবিলা করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশের বৈরিতা সামলে দেশকে একটা মোটামুটি চলনসই অবস্থায় নিয়ে আসার বিষয়টি যে মোটেও সহজ ছিল না, এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না। তারপরও দেশটা তো শুধু টিকে থাকেনি, ঘুরেও দাঁড়িয়েছিল।

এ কথা এখন পরিষ্কার যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল একটি ভাবাদর্শকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য, যা মোটেও গণতন্ত্র অথবা কৃষক-শ্রমিকের ভাগ্য উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না, বরং ছিল কড়া ডানের, ধর্মকে পুঁজি করে তারা রাজনীতি করে তাদের এবং দিনের শেষে যারা বিশ্বপুঁজির স্থানীয় বিকাশ ঘটায়, তাদের ক্ষমতা দখলের জন্য। আমাদের সময়ে এসে এই ভাবাদর্শের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।

২.

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় আসে, তারাও পাকিস্তানের পথ ধরেই অগ্রসর হয়। তারাও পাকিস্তানের মতো সামরিক বাহিনীকে রাজনীতির নিয়ন্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়, ধর্মতন্ত্রকে সামনে এনে রাজনীতির খোলস তৈরি করে। পঁচাত্তর থেকে তাই এ পর্যন্ত যে রাজনীতি আমাদের দেশে হয়েছে, তাতে এই ধারা আছে একদিকে এবং অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থী ধারাটি আছে অন্যদিকে । এই দুই ধারা এখন বিশ্বের অনেক দেশেই দ্বন্দ্বমান।

ভারতে দীর্ঘদিন রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক অংশটি ছিল শক্তিশালী। দেড়-দুই দশক থেকে অসাম্প্রদায়িকতাকে ছাপিয়ে সাম্প্রদায়িক ধারাটি শক্তিশালী হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গত এক দশকে রক্ষণশীলতা এবং উগ্রতার বিস্তার ঘটেছে; অসাম্প্রদায়িক ও উদারপন্থী ধারাটি যথেষ্ট শক্তি হারিয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে উদারপন্থীদের জন্য বেশ বড়সড় পরাজয় অপেক্ষা করছে, এমন শঙ্কা অনেকেই করছেন।

বাংলাদেশের একান্ন বছরের ইতিহাসে রক্ষণশীল, সাম্প্রদায়িক, উগ্রবাদী ইত্যাদি নানা প্রকাশে যে রাজনীতির চর্চা হয়েছে, তার শক্তির বৃদ্ধি যেমন ঘটেছে, অনেকটা আনুপাতিক হারে যেন উদারপন্থী ও অসাম্প্রদায়িক ধারার রাজনীতির শক্তিক্ষয়ের বিষয়টিও ঘটেছে এবং এর শুরুটাও হয়েছে সেই পঁচাত্তরের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে।

বঙ্গবন্ধুর দেশ পরিচালনার সাড়ে তিন বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে তিনি যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন, তার একটি ছিল একটি সংবিধান তৈরি করা। সেই সংবিধান অসাম্প্রদায়িকতাকে একটি নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। দ্বিতীয় কাজ ছিল একটি শিক্ষানীতি তৈরি করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা। সেই শিক্ষা কমিশনের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী শিক্ষাকে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে দেখা হয়।

পঁচাত্তরের পরবর্তী সরকার সংবিধানটি বদলে এর অসাম্প্রদায়িক নীতি ছেঁটে ফেলে পাকিস্তানি ধারার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক আবহ সৃষ্টিতে সচেষ্ট হলো। শিক্ষা কমিশন রিপোর্টটিও তারা হিমঘরে পাঠিয়ে দিল। এর পর থেকে রাজনীতির সাম্প্রদায়িকীকরণ হলো, শিক্ষার ক্ষেত্রেও পাঠ্যবইয়ের বাইরে, জনজীবনে, সংস্কৃতিতে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ রাখা হলো না, মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পেল। একুশ বছর এই শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকল।

কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেখা গেল, একুশ বছরের চর্চাটি ছুড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সাম্প্রদায়িক, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির চর্চাটি প্রচুর মানুষের মনোজগতে একটা স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক, উদারপন্থী পক্ষটি অনুদার হলো, অসাম্প্রদায়িকতার ভূমিতে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকে পড়ল। এখন এই দুই পক্ষের মধ্যে তত্ত্বগত পার্থক্য যেটুকু আছে, চর্চাগত পার্থক্য ততটা নয়। রক্ষণশীলতার আর উগ্রতার স্রোতটা বড়ই তীব্র।

এখন যুক্তিবাদের আর আধুনিকতার পীঠস্থান বলে খ্যাত ইউরোপেও এর প্রভাবে অনেক ভাঙন ধরছে এবং পরিতাপের বিষয় হলো, এই উগ্রতা শুধু ডানের দর্শনগত উত্থান ঘটাতে চাইছে না, বরং সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা পেতে চাইছে। এ জন্য রাজনীতিতে এর চর্চাকারীরা বর্ণবাদ, অভিবাসী ও নারীবিদ্বেষ এবং ইসলামবিরোধিতাকে সচল মুদ্রা করে বাজারে নেমেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অতি সম্প্রতি উগ্র ডানকে ক্ষমতায় যেতে সশস্ত্র সংঘর্ষের ডাক দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন আরেকটি ‘সিভিল ওয়ার’–এর কথা উচ্চারিত হচ্ছে। হয়তো এসব বহুলাংশে রেটোরিক। কিন্তু রেটোরিকের প্রভাবে বুদ্ধি–বিবেকহীন মানুষ যে স্বদেশি হত্যায় লিপ্ত হতে পারে, একাত্তরে আমরা তো তা দেখেছি।

৩.

কিছুদিন আগে দার্শনিক-তাত্ত্বিক স্লাভোই জিজেক পশ্চিমা বিশ্বের বামপন্থী এবং চূড়ান্ত ডানের অনুসারীদের মধ্যে কী কী মিল রয়েছে, সে বিষয়ে লিখতে গিয়ে (ডেইলি স্টার, ৪ আগস্ট ২০২২) এক জায়গায় বলেছেন, বামপন্থীরা এখন আর শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলে না এবং এদের অনেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার মালিক।

আবার যারা উগ্র ডান, তারাও সাধারণ মানুষকে আগ্রাসী রাষ্ট্র ও চক্রান্তকারী বামপন্থীদের থেকে রক্ষা করার নামে মায়াকান্না করে এবং এ তথ্য আড়াল করে যে তাদেরও রয়েছে শক্তিশালী অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা। এটি এখন বিশ্বের অনেক জায়গায়ই ঘটছে।

এই উপমহাদেশেও এখন বামপন্থা কোণঠাসা। অনেক দেশে ধর্মতন্ত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। শ্রেণিসংগ্রাম অথবা কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা কোথাও প্রাধান্য পায় না। বাংলাদেশে ডানপন্থীরা যে মোর্চা তৈরি করেছে, তাতে উগ্র ডানের সঙ্গে বাম বলে পরিচয় দেওয়া দু-এক দল যোগ দিয়েছে।

উগ্র ডান যখন সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটায়, সেই বাম অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকে, নয়তো অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে ওষ্ঠসেবা দেয়। আর যে পক্ষ অসাম্প্রদায়িকতা ও উদারবাদকে অবলম্বন করে রাজনীতি করছে, ক্ষমতায়ও আছে, সে পক্ষ এখন একাত্তরের উদ্দেশ্য থেকে অনেক দূরেই চলে গেছে। এ পক্ষের অনেকেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছেন। এ দুই পক্ষের বক্তৃতায়, বিবৃতিতে, কর্মসূচিতে ‘মেহনতি জনগণ’ মাঝেমধ্যে এখনো নিশানা, শুধু বাস্তবে নেই।

৪.

২০২২ সালের ১৫ আগস্টে তাই শুধু শোক করা নয়, আত্মসমালোচনা করারও প্রয়োজন আছে এবং তা করতে হবে সেই কিছু সত্যের জায়গা থেকে, যা একাত্তরে আমাদের ঐক্য দিয়েছিল। এর প্রথমটি বাংলাদেশে পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধে আমাদের রাজনীতির উদারীকরণ; কৃষক, শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার-নির্দিষ্ট এবং মৌলিক অধিকারপন্থী হওয়া।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিকতা এবং উদারপন্থাকে শক্তিশালী করা। তৃতীয়টি দেশের অর্থনীতিকে বাজার অর্থনীতির কাছে বিসর্জন না দিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষ, বিশেষ করে কৃষক ও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষায় বিন্যস্ত করা। এটি সমাজতন্ত্রের প্রচলন নয়—তা সম্ভবও নয়; বরং ন্যায্যতা এবং উৎপাদন ও বণ্টনের সুষম ভারসাম্যের প্রতিষ্ঠা। চতুর্থটি হলো, শিক্ষাকে উদারনৈতিক, মানবিক ও জীবনমুখী করার জন্য একে নিও-লিবারেলিজমের কবজা থেকে মুক্ত করে নিজেদের সংস্কৃতির আলোকে সাজানো।

একাত্তরের ইতিহাসকে ভুলে গিয়ে, পাকিস্তানি রেটোরিককে মান্য করে, এ দেশের মানুষের ২৪ বছরের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের, বিশেষ করে একাত্তরের,‌ একটা মনগড়া পাঠ তৈরি করে দেশটাকে ভবিষ্যতের পথে নেওয়া যাবে না।

যে দেশ তার সাফল্যের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করতে পারে না, সেই ইতিহাসকে যদি পড়া হয় এককালীন ঔপনিবেশিক শাসকের গছিয়ে দেওয়া চশমা দিয়ে, সে দেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে কীভাবে দাঁড়াবে? একসময় আমরা দেখতাম, বিশ্বের যেখানেই মানবতা আক্রান্ত হতো, আমরা প্রবলভাবে প্রতিবাদ করতাম।

এখন বানভাসি শিশুদের কষ্টে আমরা প্রতিবাদী হই না, ইসরায়েলিদের বোমার আঘাতে ফিলিস্তিনের শিশুদের শরীর ছিন্নভিন্ন হলেও আমরা চুপ করে থাকি, যেন এ সবই স্বাভাবিক। পঁচাত্তরের নির্মমতাকে যঁারা মেনে নেন, তঁাদের সেই প্রতিবাদের নৈতিক ভূমিই তো থাকে না।

যাঁরা প্রগতিশীল রাজনীতি করেন, কিন্তু কাজের পরিবর্তে আদর্শগত ওষ্ঠসেবাকেই পদ্ধতি হিসেবে বেছে নেন, তাঁরাও সেই নৈতিক বল হারান। আমাদের রাজনীতি নিয়ে গর্ব করার দিন শেষ।

বঙ্গবন্ধু সারা জীবন অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করেছেন, এর চর্চা করেছেন। তিনি শিক্ষাকে এক মানবিক জাতি গঠনের ভিত্তি হিসেবে দেখতেন। মেহনতি মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। তাঁর অনুসারীরা যদি এসব বিষয় মনে রেখে কাজ নামেন, ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সূচনা তো হয়। কিন্তু সেই লক্ষণ কি শিগগিরই দেখা যাবে?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, লেখক শিক্ষাবিদ