কারাগারে থেকেও আসামি স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা

চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক আলী মুর্তজা খান ও সহত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শাহ ইমরান সিদ্দিকী

পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগের এক মামলায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা দুজন ছিলেন কারাগারে। কিন্তু আগের দিন রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশকে ইটপাটকেল নিক্ষেপের মামলায়ও তাঁদের আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক আলী মুর্তজা খান (৩৬) এবং সহত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শাহ ইমরান  সিদ্দিকী ওরফে জ্যাকসন (৩৮)। নতুন মামলায় আলী মর্তুজাকে ১ নম্বর, আর শাহ ইমরানকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিঞা সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আলী মুর্তজা খান ও শাহ ইমরান সিদ্দিকীকে ৭ মে কারাগারে আনা হয়েছিল। তাঁরা দুজনই জামিনে সোমবার সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, নগরের কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় ৭ মে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভুঞার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন নগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক আলী মুর্তজা খান এবং সহত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শাহ ইমরান সিদ্দিকীসহ ৩৯ জনকে কারাগারে পাঠান। সেই মামলায় সোমবার তাঁরা জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

কারাগারে থাকা অবস্থায় আলী মুর্তজা ও শাহ ইমরান কীভাবে পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি হলেন, সে প্রশ্নের জবাবে নগরের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আমি দেখতেছি।’ মামলাটি করেছিলেন চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফুর রহমান। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।

গত ১৬ জানুয়ারি নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন পুলিশের পাঁচ সদস্য। সংঘর্ষকালে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজীর দেউড়ি এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। হামলার অভিযোগে বিএনপির ১৬ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্যসচিব আবুল হাশেমসহ প্রায় ৬০০ জনকে আসামি করে পৃথক চারটি মামলা হয় কোতোয়ালি থানায়। তার একটি মামলায় কারাগারে ছিলেন আলী মুর্তজা খান ও শাহ ইমরান সিদ্দিকী।

এদিকে রোববার বিকেলে নগর বিএনপির পদযাত্রা বহদ্দারহাট মোড়ে এসে শেষ হয়। এর কিছুক্ষণ আগে পদযাত্রায় থাকা লোকজনকে সরে যেতে বাঁশি দেয় পুলিশ। তখন বিএনপির নেতা–কর্মীদের কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে সবাই চলে যান। এ ঘটনায় রোববার রাতে চান্দগাঁও থানার এসআই লুৎফুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আলী মুর্তজা খান, শাহ ইমরান সিদ্দিকী, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেনসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৬০০ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসম্পাদক নুহ গাজী সেলিমসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আলী মুর্তজা খান রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ধ্যায় কারাগার থেকে বের হয়েছি। কীভাবে বহদ্দারহাটে পুলিশকে ইটপাটকেল ছুড়ে মেরেছি, তা বুঝতে পারছি না।’

কারাগারে থেকে মামলার আসামি হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ–ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক শাহ ইমরান সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনা না ঘটলেও পুলিশ মামলা করে—তারই প্রমাণ কারাগারে থাকা অবস্থায় তাঁকে আসামি করাটা।

কারাগারে থাকা দুই নেতাকে মামলার আসামি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এ এইচ এম রাশেদ খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা পুলিশ বাহিনী আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসব করছে।’ এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তিনি।