জলাবদ্ধতা নিরসনের দায় এড়ালেন চট্টগ্রামের মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে না পারার দায় আবারও এড়ালেন সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের কাজ চললেও এর কোনো সুফল এসেছে বলে মনে করছেন না নগরবাসী। কিন্তু জলাবদ্ধতা হলেই নগরবাসী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দায় দেন। অথচ প্রকল্প নিরসনের দায়িত্বে তাঁরা নেই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩১তম সাধারণ সভায় আজ সোমবার দুপুরে সভাপতির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরের নন্দনকাননের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে নগরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে সিডিএ সমন্বয় করছে না অভিযোগ তুলে ক্ষোভ জানিয়ে ৬ আগস্ট ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম নগরের বারবার জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পের কাজ চলার পরেও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি দিনের পর দিন অবনতি হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তাঁরা। পানিপ্রবাহ নির্বিঘ্ন করার জন্য খাল ও নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলনের দাবি জানান কাউন্সিলররা।

চট্টগ্রাম নগরে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ১২ বার জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়েছে। শুধু আগস্টে ছয়বার ডোবে নগর। সর্বশেষ গত রোববারও নগরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এর মধ্যে এক শিশু নালায় পড়ে মারা যায়। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ ২টি, সিটি করপোরেশন ১টি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ১টি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ছয় বছরে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

আজ সাধারণ সভায় সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতায় যখন চট্টগ্রাম নগর পরিত্যক্ত হওয়ার পথে, তখন ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। ওই সময় সিডিএ একটি প্রকল্প নেয়। সরকার সেটির অনুমোদন দেয়। কিন্তু এত বছর ধরে প্রকল্পটির কাজ চললেও জলাবদ্ধতা তো কমেনি; বরং দিনের পর দিন বাড়ছে। তাহলে এই দায়ভার কে নেবে। যথাযথভাবে কাজ না হওয়ায় প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হলে সুফল পাওয়া সম্ভব।

নগরের পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিল মো. শহিদুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা দিনের পর দিন পানিতে তলিয়ে যায়। পাশে চাক্তাই থাকলেও তা অনেক দিন ধরে ঠিকভাবে খনন করা হচ্ছে না। এভাবে হলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে না। মানুষ খুব কষ্ট পাচ্ছেন। এর থেকে মুক্তি দিতে হবে।

কাউন্সিলরদের ক্ষোভের পর মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিয়ে আমরা একাধিক সমন্বয় সভা করেছি। সভায় সিডিএর যখন যে প্রতিনিধি আসেন, তিনি দ্রুততম সময়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। বাস্তবে সিডিএর প্রকল্পের কোন সুফল এসেছে বলে নগরবাসী মনে করে না। কাউকে দোষারোপ করি না, শুধু সিডিএকে বলতে চাই নগরবাসী আর কষ্ট পেতে চায় না। আপনারা জনগণের মতামতকে মূল্যায়ন করে, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দ্রুততম সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সম্পন্ন করুন।’

নগরে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সিডিএর পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের অনাপত্তি নেওয়ার বিষয়ে মত দেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।