শিল্পী হাশেম খান নিজের সব কাজেই বাংলাকে ধরে রেখেছেন

বরেণ্য শিল্পী হাশেম খানের ‘চিত্রকলা ভাস্কর্য ম্যুরাল ও ড্রইং ১৯৫৬-২০২৩’ শীর্ষক অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) মো. মাহবুবুর রহমান, লুভা নাহিদ চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, নাহিদ ইজহার খান, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, হাশেম খান ও মফিদুল হক। জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা, ৮ জুনছবি: এইচএসবিসির সৌজন্যে

বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি পর্বে জড়িয়ে আছে বরেণ্য শিল্পী হাশেম খানের কাজ। ছয় দফা আন্দোলনের মঞ্চসজ্জা, মুক্তিসংগ্রামের পোস্টার, পাঠ্যবইয়ের অলংকরণ, অসংখ্য বইয়ের প্রচ্ছদ— সবকিছুতে তিনি ধরে রেখেছেন বাংলাকে। ‘সৃজন গুণীন হাশেম খান’ শিরোনামের আয়োজনে ‘চিত্রকলা ভাস্কর্য ম্যুরাল ও ড্রইং ১৯৫৬–২০২৩’ শীর্ষক অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে এল কথাগুলো।

রাজধানীতে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে আজ শনিবার সকালে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এইচএসবিসি ব্যাংক। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে শিল্পী হাশেম খানের আঁকা ছবি থেকে বাছাই করা ২২০টি ছবি নিয়ে সাজানো হয়েছে এই অ্যালবাম। অ্যালবামটির পরিবেশক জার্নিম্যান বুকস।

অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচনের আগে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘কবি পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, দেশ ছায়ার মতো। হাশেম খানের কাজ যা–ই দেখি, সেখানে দেশের ছায়া প্রতিভাত হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, হাশেম খানের শিল্প অভিযাত্রার একটি প্রয়াস এই প্রকাশনা। তিনি বলেন, জলরঙের কাজে পিছিয়ে পড়েছিল এ দেশ। তবে হাশেম খান ও রফিকুন নবীর যৌথ জলরঙের প্রদর্শনী একটি অভিঘাত তৈরি করেছিল। এ সময় তিনি ছয় দফা আন্দোলনের সময় মঞ্চসজ্জায় হাশেম খানের নেতৃত্বে অসাধারণ কাজের উদাহরণ তুলে ধরেন।

‘চিত্রকলা ভাস্কর্য ম্যুরাল ও ড্রইং ১৯৫৬-২০২৩’ শীর্ষক অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে (বাঁ থেকে) লুভা নাহিদ চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, নাহিদ ইজহার খান, কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, হাশেম খান ও মফিদুল হক। জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা, ৮ জুন
ছবি: এইচএসবিসির সৌজন্যে

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরীর বক্তব্যে উঠে আসে শিল্পী হাশেম খানের ছবিতে একই সঙ্গে রুদ্ধ ও মুক্ত হওয়ার অনুভবের কথা। তিনি বলেন, প্রগতিচিন্তার একজন নিরলস সাধক হাশেম খান।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘হাশেম খানের প্রথম থেকেই দেশ ও মানুষের প্রতি যে অঙ্গীকার, এটাই তাঁর জীবনের বড় দর্শন। অনেক সংকটের মধ্যেও তাঁকে দেখেছি অবিচল থাকতে। তাঁর সমস্ত শিল্পকর্মেও উঠে এসেছে সে দর্শন।’

শিল্পী হাশেম খান নিজের কাজ সম্পর্কে বলেন, ‘১৯৫৬ থেকে ২০২৩—এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিদিনই ছবি এঁকেছি। ছবি আঁকাটাই আমার কাজ।’ শিল্প সংগ্রহ কতখানি দুরূহ কাজ, উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি জাতীয় জাদুঘরে রাখা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসানের মতো অনেক শিল্পীর ছবি সংরক্ষণের সীমাবদ্ধতার প্রসঙ্গে কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজক এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অধ্যায় ধরা রয়েছে হাশেম খানের চিত্রে। বাংলাদেশকে জানতে হলে হাশেম খানকে জানতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান। তিনি বলেন, ‘শৈশবে আমাদের নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষার অন্যতম আগ্রহে থাকত শিল্পী হাশেম খানের আঁকা ছবি। তিনি আঁকা ছবি দিয়ে আমাদের শিশুমনে ষড়্‌ঋতুকে চেনাতেন।’

অনুষ্ঠানের অতিথিরা ‘চিত্রকলা ভাস্কর্য ম্যুরাল ও ড্রইং ১৯৫৬–২০২৩ অ্যালবাম’–এর মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল শিল্পী হাশেম খানকে নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী দিয়ে। এইচএসবিসির পক্ষ থেকে তৈরি এই প্রামাণ্যচিত্রে তুলে ধরা হয় হাশেম খানের কাজ ও ভাবনা। আয়োজনের শেষে ছিল রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী অদিতি মহসিনের কণ্ঠে সংগীত পরিবেশনা।