নভোএয়ার বন্ধ ঘোষণার পর ফ্লাইট কমাচ্ছে বিমান

বিমানের ফ্লাইট কমিয়ে দেওয়ায় বরিশালের ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।

পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় বরিশাল–ঢাকার নৌরুটের মতো বিরূপ প্রভাব পড়েছে আকাশপথেও। যাত্রীসংকটের কারণে বরিশাল–ঢাকা পথে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা নভোএয়ার। এবার সপ্তাহে চার দিন এই পথে ফ্লাইট কমানোর ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ পরিচালন প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

বিমানের বরিশাল কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ৫ আগস্ট থেকে তারা সপ্তাহে বৃহস্পতি, শুক্র ও রোববার—এই তিন দিন ফ্লাইট চালু রাখবে। গত শুক্রবার বিকেলে এ সিদ্ধান্ত হয়। মূলত যাত্রীসংকটের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিমানের বরিশাল কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শওকত আলী খান।

করোনা সংকট কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছিল বিমান। সেদিন বরিশালে এক অনুষ্ঠানে বিমানের তৎকালীন এমডি সুধী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে বরিশালে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইট চলাচল করবে। এমনকি যাত্রীদের দাবি অনুযায়ী, বরিশাল নগর থেকে রহমতপুর এলাকায় বিমানবন্দরে যাতায়াতের জন্য এসি বাস সার্ভিসও চালু করা হয়েছিল।

বিমানের এ ঘোষণাকে বিমাতাসুলভ আচরণ মনে হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
সাইদুর রহমান, সভাপতি, বরিশাল চেম্বার অব কমার্স

বরিশাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে যাত্রীসংখ্যা কমতে থাকে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়ে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার ও ইউএস বাংলা। যাত্রী ধরে রাখতে কোরবানি ঈদের পর তারা ভাড়া কমিয়ে দেয়। ইউএস বাংলা প্রতি আসনে সাড়ে চার হাজার থেকে ভাড়া কমিয়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে। আর নভোএয়ার চার হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা নির্ধারণ করে। বাংলাদেশ বিমানও একই পথ অনুসরণ করে ২০০ টাকা ভাড়া কমিয়ে দেয়। কিন্তু ভাড়া কমিয়েও খরচ তুলতে পারছিল না নভোএয়ার। এ জন্য তারা ১ আগস্ট থেকে বরিশালে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

ইউএস বাংলার বরিশালের বিপণন কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশাল রুটে তাদের ৭০ আসনের উড়োজাহাজ যাত্রী পরিবহন করছে। সেতু চালু হওয়ার পর প্রায়ই প্রতিটি ফ্লাইটে এক-তৃতীয়াংশ আসন ফাঁকা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ইউএস বাংলা কত দিন এই রুটে সেবা দিতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিমানের বরিশাল কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শওকত আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকায় যাতায়াতে সময় কমে গেছে। খরচ কমে আসায় আকাশপথে যাত্রী কমেছে। গত শনিবার থেকে বিমানের ভাড়া ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। এরপরও যাত্রী মিলছে না।

বরিশাল–ঢাকা পথে উড়োজাহাজের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে শওকত আলী বলেন, মূলত তাদের ফ্লাইট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ক্রুসংকটের কারণ দেখিয়ে। দেশের অন্যান্য রুটে ক্রুসংকটের কারণে ফ্লাইট বন্ধ করা হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, সেটা করা হচ্ছে না।

পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চল থেকে সড়কপথে যাত্রীর চাপ বেড়ে গেছে। এতে দক্ষিণের নৌপথগুলোয় যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। বরিশাল থেকে আধা ঘণ্টা পরপর বেসরকারি পরিবহন ও বিআরটিসির বাস যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছুটছে।

আগে যেখানে একটি বাস ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ দুটি ট্রিপ দিতে পারত, এখন দৈনিক তিন থেকে চারটি ট্রিপ দিতে পারছে। গত এক মাসে দক্ষিণের ৬টি জেলার সড়কপথে অন্তত ৫০০ নতুন বাস যাত্রী পরিবহনে যুক্ত হয়েছে। ফলে নৌ ও আকাশপথের যানগুলো যাত্রীসংকটে পড়েছে।

বিমানের ফ্লাইট কমিয়ে দেওয়ায় বরিশালের ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, বিমানের ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে বরিশালবাসী দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে।

কারও কোনো মতামত না নিয়েই আকস্মিক ক্রু বা যাত্রীসংকট দেখিয়ে ফ্লাইট বন্ধ করা হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কারসাজি থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন কেউ কেউ।

সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, একসময় এই বিমানবন্দর নির্জীব ছিল। আন্দোলন-সংগ্রাম করে সেটাকে চালু করা হয়েছে।

বিমানের এমন সিদ্ধান্তের পেছনে অন্য কোনো বেসরকারি খাতের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, বিমানের এ ঘোষণাকে বিমাতাসুলভ আচরণ মনে হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।