শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বাড়ল

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আজ মঙ্গলবার হাজির হন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকা, ১৬ এপ্রিলছবি: শুভ্রকান্তি দাশ

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তার জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২৩ মে পর্যন্ত তাঁদের জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

একই সঙ্গে এই মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল শুনানির জন্য ২৩ মে তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ আদেশ দেন।

জামিনের মেয়াদ বাড়াতে এবং আপিল শুনানি মুলতবি চেয়ে ড. ইউনূসসহ চার কর্মকর্তার করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়। অপর তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা এই মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। এ ছাড়া প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। গত ১ জানুয়ারি এই রায় দেওয়া হয়।

এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন ড. ইউনূসসহ চারজন। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল এই আপিল সেদিন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। তৃতীয় শ্রম আদালতের দেওয়া রায় ও আদেশ চলতি বছরের ৩ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে চারজনকে জামিন দিয়েছিলেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।

ধার্য তারিখ গত ৩ মার্চ আপিল ট্রাইব্যুনাল চারজনের জামিনের মেয়াদ ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ান। সেই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য ১৬ এপ্রিল তারিখ রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

বেলা ১১টার দিকে ড. ইউনূস ও অপর তিন কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হন। তাঁদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এস এম মিজানুর রহমান।

মামলার বাদী কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

এর আগে তৃতীয় শ্রম আদালতের রায় ও আদেশ স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ৩ মার্চ দেওয়া আদেশের অংশবিশেষের বৈধতা নিয়ে গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন (ক্রিমিনাল রিভিশন) করেছিলেন মামলার বাদী। এই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত ১৮ মার্চ হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাননি উল্লেখ করে সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিলের শুনানি আজ মুলতবি চান তাঁদের আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সেই সঙ্গে এই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চারজনের জামিনের আরজি জানিয়ে আরেকটি আবেদন দেন তিনি।

অন্যদিকে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে বলেন, জামিনের মেয়াদ কত দিন বাড়াবেন, তা আদালতের বিষয়। তবে আপিল শুনানির জন্য দিন ধার্য করার ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার রাখলে ভালো হয়। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই নতুন বছর যাতে শান্তিপূর্ণ হয়। এই নতুন বছরে আমরা নিজেদের যেন নতুন করে আবিষ্কার করতে পারি। নতুন বছরে তরুণ সম্প্রদায়কে যাতে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখাতে পারি। আমরা শান্তিময় পরিবেশে বসবাস করতে পারি। আমরা সমস্ত জাতিকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি, সেটার জন্য সবাই মিলে একত্রে চেষ্টা করি, এটাই দেশবাসীর প্রতি আমার আবেদন। আমরা সুন্দর দেশ গড়ে তুলি, সুন্দরভাবে বাস করি, কেউ যাতে নিরাপত্তাহীনতায় না থাকি, শঙ্কার মধ্যে না থাকি। শঙ্কামুক্ত জীবন যাপন করি, আইনের শাসনের মধ্যে জীবন যাপন করি।’