পাথারিয়া কি হবে বিরল ও বিপন্ন প্রাণীদের শেষ আশ্রয়স্থল

পাথারিয়ায় একসময় বাঘ, হরিণ, বুনো মোষসহ বড় আকারের অনেক প্রাণী ছিল। বছর দুই আগে স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায় এই বনে হাতি, বিপন্ন ফেরেট ব্যাজার, সোনালি বিড়াল, বানরসহ অনেক বিপন্ন প্রাণী ধরা পড়েছে।

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ। শীতের এক সকালে ১০টা নাগাদ আমরা ডোমাবাড়ি পৌঁছাই। ডোমাবাড়ি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের একটি ছোট্ট গ্রাম।

বনঘেরা এই গ্রামের উত্তর সীমানা পেরোলে পাথারিয়া সংরক্ষিত বনের লাঠিটিলা বন শুরু। এই বনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর সন্ধানে আমরা স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা বসিয়েছি। ক্যামেরা পর্যবেক্ষণসহ বনের প্রাণপ্রকৃতি দেখতে আমরা ভোরেই পৌঁছে যাই ডোমাবাড়ি।

গবেষণা দলের সদস্য ছাড়াও মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন। ডোমাবাড়ির খোরশেদ আলম আমাদের দলের স্থানীয় গবেষণা সহকারী ও গাইড। ওই সময়ে শীতের তীব্রতা বাড়ছিল। ছিল কুয়াশা। তবে উত্তরের বাতাস তখনো তেমন একটা ছিল না। এলাকাটি পেরিয়ে পাহাড়ি ঝিরি ধরে আমরা উত্তর দিকে এগোতে থাকি। সেগুনবাগান পেরিয়ে গেলে ধীরে ধীরে বনের নির্জনতা আমাদের মোহাচ্ছন্ন করে তোলে।

পাথারিয়া পাহাড়ের নাম অনেকের কাছেই অপরিচিত। তবে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের কথা শোনেননি, এমন মানুষ কমই আছে। এই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পাথারিয়া পাহাড়ের বুক চিরে প্রবাহিত একটি জলধারা।

বাংলাদেশ-ভারত সীমানাসংলগ্ন পাহাড়ি বন থেকে সৃষ্ট কয়েকটি ঝিরি নানা পথে এক জায়গায় মিশে মাধবকুণ্ড জলধারা সৃষ্টি করেছে। এই পাথারিয়া পাহাড় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত হয়ে দুই দেশের সীমানা বরাবর পড়েছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার মধ্যে চারটি বন বিট নিয়ে আমাদের পাথারিয়া বনাঞ্চল। পূর্ব দিকে ভারতের সীমানা, উত্তরে বড়লেখা আর দক্ষিণে জুড়ী উপজেলা। পশ্চিমের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে রয়েছে চা–বাগান। পশ্চিমে চা–বাগান আর পাহাড়ের মাঝে মাঝে বাড়িঘর। আছে খেতখামার।

পাথারিয়া বনের কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ ও ত্রিপুরা রাজ্যে পড়েছে। দুই দেশের প্রায় ২২ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে এই পাহাড়শ্রেণির অবস্থান। পাথারিয়ার বনাঞ্চলকে সেই ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯২০ সালে সংরক্ষিত বন বা রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৭ সালে পাথারিয়া পাহাড়ের আয়তন ছিল ১ হাজার ১৫২ বর্গকিলোমিটার। তবে দিন দিন এই পাহাড়ের আয়তন কমেছে। বর্তমানে সম্মিলিত আয়তন মাত্র ১৩৫ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশে পড়েছে ৮৮ বর্গকিলোমিটারের কাছাকাছি, বাকিটা ভারতে।

আমাদের এখন নতুন করে ভাবতে হবে। পাথারিয়া পাহাড় রক্ষা করতে না পারলে অতীতে নানা জাতের বুনো প্রাণীদের মেলা বসত ওই বনে। পাহাড়ের ঘন জঙ্গল থেকে হাওরের সমতল এলাকায় নেমে আসত বুনো মোষ, জলার হরিণ আর গন্ডার। ফলে শিকারিরা এসব প্রাণী খুব সহজেই শিকার করতে পারত। অতীতের সেই পাথারিয়া বনের বিরল প্রাণপ্রকৃতির ইতিহাস আমরা কতটুকুই–বা জানি। আজও এ বনে প্রাণপ্রকৃতির যেটুকু টিকে আছে, তা–ও আমাদের কাছে প্রায় অজানা। এ আমাদের বড় দৈন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিচারালয়ে দাঁড়াতে হবে।

বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে বড়লেখা বন বিটের ২৬৩ হেক্টর বনভূমি নিয়ে মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ঘোষণা করে। পাথারিয়া পাহাড়ের বাকি অংশ সংরক্ষিত বন। ব্রিটিশ আমলে তৈরি চা–বাগান গ্রাস করেছে অতীত পাথারিয়া বনের অধিকাংশ এলাকা। আজকের টিকে থাকা বনের দুপাশে আমরা সেই বনের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে পাই। চা–বাগানের ছোট ছোট টিলা অতীতের সেই বনের রাজসাক্ষী। ভারত-বাংলাদেশের দুই পাশেই সেই স্মৃতিচিহ্ন দেখা যায়। গত প্রায় ১০০ বছরে পাথারিয়া পাহাড়ের ৯০ শতাংশ বন আমরা গ্রাস করে ফেলেছি। সেই সঙ্গে বড় আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীও এ বনাঞ্চল থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

একসময় ছিল গন্ডার ও জলার হরিণ

ব্রিটিশ আমলে পাথারিয়া পাহাড়ের বেশ সুনাম ছিল। সে সময় ব্রিটিশদের সঙ্গে স্থানীয় শিকারিরা পাথারিয়া পাহাড়ে দল বেঁধে শিকারে বের হতেন। বাঘ, হরিণ, বুনো মোষ ছাড়াও বড় আকারের বুনো প্রাণী শিকার করতেন তাঁরা। শিকারি প্রাণীর তালিকায় আরও ছিল বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া গন্ডার ও জলার হরিণ।

অতীতে নানা জাতের বুনো প্রাণীদের মেলা বসত ওই বনে। পাহাড়ের ঘন জঙ্গল থেকে হাওরের সমতল এলাকায় নেমে আসত বুনো মোষ, জলার হরিণ আর গন্ডার। ফলে শিকারিরা এসব প্রাণী খুব সহজেই শিকার করতে পারত। অতীতের সেই পাথারিয়া বনের বিরল প্রাণপ্রকৃতির ইতিহাস আমরা কতটুকুই–বা জানি। আজও এ বনে প্রাণপ্রকৃতির যেটুকু টিকে আছে, তা–ও আমাদের কাছে প্রায় অজানা। এ আমাদের বড় দৈন্য।

মেছো বিড়ালের খোঁজে ২০১৮ সালে পাথারিয়া পাহাড়ের ঝিরি ও বুনো পথে আমরা কিছু স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম। রাতের গভীর অন্ধকারে চলাচলকারী প্রাণীর ছবি তোলে এসব ক্যামেরা। এভাবে টানা দুই বছর পাথারিয়া পাহাড়ের নানা অংশে ক্যামেরা রেখে আমরা বুনো প্রাণীর উপস্থিতি ও চলাচল পর্যবেক্ষণ করেছি। এসব ক্যামেরার ছবিতে বুনো প্রাণী ছাড়াও বনে বিচরণকারী নানা শ্রেণির মানুষের ছবি ধরা পড়ে। যাদের বড় অংশ চোরা শিকারি।

চিতা ও বাঁশমহালের স্মৃতি

বর্তমানে পাথারিয়া বনে প্রাকৃতিক গাছপালা খুব একটা টিকে নেই। মাধবছড়া ও লাঠিটিলা বনের সীমানা পাথারিয়া পাহাড়ের প্রাচীন ঐতিহ্যের কিছু কিছু ধরে রেখেছে। পাশাপাশি লাঠিটিলায় আছে বিস্তৃত সুরমা বাঁশমহাল। আছে বড় কয়েকটি হান্ডর (পাহাড়ি ছড়া বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর ফলে সৃষ্ট জলাশয়; এর মাধ্যমে অতীতে বাঁশমহাল থেকে বাঁশ কেটে ভাসিয়ে বনের বাইরে আনা হতো)। লাঠিটিলা ও সমনবাগ বনের বড় অংশে সেগুন ও ফলবাগানের কারণে বুনো প্রাণীরা সেখানে কম আসে।

কারণ, বন্য প্রাণী সেখানে নিরাপদ থাকছে না। এ অঞ্চলের টিলাগুলো উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি বিস্তৃত, ওপর থেকে দেখলে লাঠির মতো দেখায় বলে এর নাম হয়ে গেছে লাঠিটিলা। স্থানীয়রা এমনটাই মনে করেন। লাঠিটিলা বনের নানা প্রান্তে মাঝে মাঝে ঠাসা বাঁশের দু–একটা গাছের উপস্থিতি চোখে পড়ে।

২০০৭ সালে লাঠিটিলা বনে একটি চিতাকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় মানুষজন বনে তাঁদের গবাদিপশু ছেড়ে দেন। এভাবে চরতে থাকা গরুকে শিকার করতে আক্রমণ করে চিতা। পরে সেই গরুটি আর বাঁচানো যায়নি। স্থানীয় লোকজন মৃত গরুর দেহে বিষ মিশিয়ে ফেলে রাখে। পরে সেই গরুর মাংস খেয়ে মারা যায় চিতা। এখন এই বনে বৃহদাকার শিকারি প্রাণীর মধ্যে সোনালি বিড়ালের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এটা দেখে আমরা কিছু আশান্বিত হলেও চিতার অনুপস্থিতি আমাদের আশাহত করেছে।

এই বনে এখনো আছে মায়া হরিণ, আছে বুনো শুয়োর। আছে আরও নানা জাতের প্রাণী। সুতরাং এই বনে চিতা থাকার সম্ভাবনা এখনো উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তেমনি ভালুকের উপস্থিতিও অমূলক নয়।

মাত্র চারটি মেয়ে হাতির একটি দল আজও বনে তাদের পূর্বপুরুষের পথ অনুসরণ করে চলেছে। বনের আনাচকানাচে তাদের পদচিহ্ন দেখে আমরা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। বুনো হাতির দেশ আজ মানুষের দেশের কাঁটাতারে দ্বিখণ্ডিত। এরা বিলুপ্তির প্রহর গুনছে।

আরও পড়ুন

আমরা যখন বনের ঝিরিপথ ধরে হাঁটছি, তখন অতীতের সেই বনের বৃহৎ আকারের প্রাণীর ছবি আমাদের মানসপটে ভেসে উঠল। তবে গভীর বনে মাঝারি ও ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীর নানা আলামত দেখে এখনো মন আশান্বিত হয়। মনে হয়, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। সীমান্তবর্তী ঝিরিপথের দুই পাশের বুনো পরিবেশ দেখে মনে হয়েছে, এখনো অতীতের সেই প্রাণীদের এই বনে ফিরিয়ে আনার সুযোগ আছে।

বনে নানা প্রাণীর পায়ের চিহ্ন, মল, শিকারের নমুনা দেখা গেল। সেই সঙ্গে বিরল সব প্রাণীর ছবি ধরা পড়েছে আমাদের বসানো স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরায়। ঝিরিপথে দুই পাশে পাহাড় খাড়া হয়ে উঠে গেছে, নির্জন বন, নানা জাতের পাখির কলকাকলি আমাদের মনে চমৎকার অনুভূতির দোলা দিয়ে গেল।

বড় বড় পাথর শেওলার গাঢ় সবুজ আবরণে মোড়ানো। খাড়া পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ঝিরিপথ, কলকল শব্দে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ নিটোল পানির ঝরনাধারা। বনের নানা পথে এমন অনেক ঝিরির দেখা পাওয়া যায়। পাহাড়ি ঝিরি আর বড় পাথরের এমন প্রাকৃতিক বনাঞ্চল এ অঞ্চলে বিরল।

ক্যামেরায় যা দেখা গেল

দীর্ঘ তিন বছরের গবেষণায় পাথারিয়া বনে টিকে থাকা স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপস্থিতি দেখে আমরা রীতিমতো অবাক হয়েছি। ক্যামেরায় ধরা পড়া প্রাণীর তালিকায় দেশের সব বিরল স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। এখানে এমন অনেক প্রাণী রয়েছে, যা উত্তর-পূর্ব এই এলাকার সংরক্ষিত বনেও নেই। ক্যামেরায় তোলা ছবিতে সোনালি বিড়াল কিংবা ভালুকের মতো নখ এবং দেখতে কাঠবিড়ালির মতো বিপন্ন প্রাণী ‘ফেরেট ব্যাজার’ আমাদের আশান্বিত করে তুলেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে স্তন্যপায়ী প্রাণীর যে লাল তালিকা তৈরি করেছে সেখানেও ফেরেট ব্যাজারের কোনো হদিস নেই। পাথারিয়া বনে দেখতে পাওয়া এটি দেশের জন্য একটি নতুন প্রাণী। আর সোনালি বিড়ালও দেশে তেমন নেই। দু–একটি মাত্র থাকার রেকর্ড আছে দেশে। এ ছাড়া আসামিস বানরের ভালো উপস্থিতি আছে পাথারিয়ায়। দেশের উত্তর-পূর্ব এলাকার আর কোনো বনে এই বানর টিকে আছে, এমন তথ্যও আমাদের হাতে নেই। এ এলাকার এটিই একমাত্র বন, যেখানে মোট সাত প্রজাতির বানরজাতীয় প্রাণী আছে। এর মধ্যে আছে দুই প্রজাতির হনুমান, তিন প্রজাতির বানর, মহাবিপন্ন উল্লুক ও লজ্জাবতী বানর।

এই বনে বেশ ভালোসংখ্যক ক্ষুদ্র নখযুক্ত উদ্‌বিড়াল আছে। দেশের সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও এদের থাকার নজির নেই। বনের ঝিরিপথে খাদ্য শিকার করে এরা। দলে দলে বিচরণ করে। বিশ্বব্যাপী মহাবিপন্ন বনরুই থাকার চিহ্ন চোখে পড়ল নানা জায়গায়। স্থানীয় মানুষজনও ওই মহাবিপন্ন প্রাণীটির অস্তিত্বের কথা নিশ্চিত করলেন।

পাথারিয়া বনে এখনো টিকে আছে মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল ও বন বিড়াল। মেছো বিড়াল পৃথিবীতে বিপন্ন প্রাণী। হাওর অঞ্চলে মানুষের হাতে দেদার মারা পড়ছে এই প্রাণী। এ কারণে পাথারিয়া হয়ে উঠতে পারে এই প্রাণীর শেষ আশ্রয়। চিতা বিড়ালের বাচ্চা ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বেশ কয়েকবার। সে এক বিরল দৃশ্য।

ক্যামেরায় আরও ধরা পড়েছে ধূসর (অ্যালবিনু) হগ ব্যাজার। এরা শূকরজাতীয় প্রাণী, তবে বেশ বিরল। বাংলাদেশে এই অ্যালবিনু হগ ব্যাজার ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। চার প্রজাতির গন্ধগোকুলের ছবি এসেছে ক্যামেরায়। এ ছাড়া আছে দুই প্রজাতির বেজি, এক প্রজাতির শজারু, হলুদ গলা মার্টিন ও পাতিশিয়াল। আরও এসেছে মহাবিপন্ন বিরল কাঠময়ূর।

আরও পড়ুন

সম্ভবত প্রাণীর শেষ আশ্রয়স্থল

পাথারিয়া পাহাড়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল যতটুকু টিকে আছে, তা সংরক্ষণ করা গেলে এসব প্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। মাধবছড়া ও লাঠিটিলা সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের সঙ্গে সমনবাগের কিছু এলাকাজুড়ে এখনই সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া বন্য প্রাণী শিকারি ও কাঠ চোরাকারবারিদের দমন করতে হবে। চারপাশের সৃজিত বাগান এবং চা–বাগান এসব প্রাণীর নিরাপদ এলাকা বা বাফার জোন হিসেবে কাজ করতে পারে।

পাথারিয়া পাহাড়ে মানুষের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। একে ছেড়ে দিতে হবে প্রকৃতির ওপর। এতে যে পাথারিয়া ধীরে ধীরে বিরল বন্য প্রাণীর শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে উঠবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। অতীতে কতটুকু কী হয়েছে, সেদিকে আমাদের তাকিয়ে আর লাভ নেই।

আমাদের এখন নতুন করে ভাবতে হবে। পাথারিয়া পাহাড় রক্ষা করতে না পারলে অতীতে নানা জাতের বুনো প্রাণীদের মেলা বসত ওই বনে। পাহাড়ের ঘন জঙ্গল থেকে হাওরের সমতল এলাকায় নেমে আসত বুনো মোষ, জলার হরিণ আর গন্ডার। ফলে শিকারিরা এসব প্রাণী খুব সহজেই শিকার করতে পারত। অতীতের সেই পাথারিয়া বনের বিরল প্রাণপ্রকৃতির ইতিহাস আমরা কতটুকুই–বা জানি। আজও এ বনে প্রাণপ্রকৃতির যেটুকু টিকে আছে, তা–ও আমাদের কাছে প্রায় অজানা। এ আমাদের বড় দৈন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিচারালয়ে দাঁড়াতে হবে।

  • এম এ আজিজ অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়