ছেলে মোহাইমিনুল ইসলামকে জড়িয়ে শুয়ে আছেন নজরুল ইসলাম। এক সপ্তাহ ধরে ছেলেটির জ্বর। ডেঙ্গু পজিটিভ। শনিবার থেকে হাসপাতালে ভর্তি। জ্বর নজরুল ইসলামেরও। তাঁরও ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। কিন্তু নিজের দিকে খেয়াল রাখার ফুরসত কোথায় এই বাবার। ছেলেকে সুস্থ করার নিরন্তর প্রচেষ্টা। পারলে ছেলের সব অসুখ যেন নিজে নিয়ে নেন বাবা।
সোমবার দুপুরে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের ২২১ নম্বর কেবিনে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে বুকে আগলে রাখছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। একপর্যায়ে জ্বর ১০৫ ডিগ্রি হয়ে গেল। নজরুল নার্স-চিকিৎসকদের ডাকাডাকি শুরু করলেন। বিছানা থেকে ওঠে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটছেন।
৯ বছরের মোহাইমিনুল তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ২৯ আগস্ট থেকে তার প্রচণ্ড জ্বর আসে। পরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে।
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিই। কিন্তু এখনো জ্বর আসছে কিছুক্ষণ পরপর। কাশিও হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ। এখন আবার জ্বর আসছে। কীভাবে কী করব, বুঝতে পারছি না।’
তাঁরা নগরের আইস ফ্যাক্টরি রোড এলাকায় থাকেন। নজরুলের স্ত্রী গুলশান আকতার স্কুলশিক্ষক। স্বামী ও সন্তানের ডেঙ্গু ধরা পড়ায় তিনিও উদ্বিগ্ন। হাসপাতালে দুজনের সেবা করে চলেছেন তিনি। পুরো সংসার যেন এখন হাসপাতালে। তাঁদের ছোট ছেলেটিও হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে।
গুলশান বলেন, ‘ছেলের জ্বর এই কমে, এই বাড়ে। তার কাশিও রয়েছে। চিকিৎসকেরা দেখছেন। প্লাটিলেট আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে জানান। এরপরও মন মানে না। জানি না, এখান থেকে কবে নাগাদ মুক্তি পাব।’
নজরুল ও গুলশানের চিন্তাজুড়ে রয়েছে ছেলের অসুস্থতা। ছেলেটি একটু কাশি দিলে উদ্বেগ বেড়ে যায় তাঁদের। পারলে ছেলের সব খারাপ লাগা নিজের করে নেন যেন।
গুলশান জানান, ছেলের চিন্তায় নিজের অসুখ নিয়ে ভাবছেন না তার বাবা। রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন শনিবার। তখনো তাঁর প্লাটিলেট ঠিক ছিল। এরপর আর করেননি। এখন ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত। ছেলের জ্বর বেড়ে যাওয়ায় চিন্তা বেড়েছে।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ছেলেটির প্লাটিলেট এখন ভালো আছে। অন্যগুলোও ভালো। তবে কেন বেশি জ্বর আসছে, তা আবার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
ছেলের অসুস্থতার কারণে নিজেকে নিয়ে ভাবছেন না নজরুল। শুক্রবার রাত থেকে তাঁর জ্বর আসে। নজরুল বলেন, ‘শনিবার পরীক্ষা করেছি। আমার ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা। আমার নিজের সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। বাচ্চাদের কেমন লাগছে তো বুঝতে পারছেন।’
এদিকে চট্টগ্রামে শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ১৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বিকেলে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, মারা যাওয়া নারীর নাম বিবি আলমাস (৩৩)। গত শনিবার ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে তিনি মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ নিয়ে এবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু দাঁড়াল ৫৫ জনে। এ বছর চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ২৬৬ জন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩১৭ জন।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১৫ জন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ৪৫ জন চিকিৎসাধীন।