ভবিষ্যতে শিল্প প্লট বরাদ্দে নীতিমালা তৈরি করতে নির্দেশ হাইকোর্টের
রাজধানীর হাতিরঝিল–তেজগাঁও শিল্প এলাকায় দুই দশকের বেশি সময় আগে ২৪টি প্লটের বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় আইনের ব্যত্যয় হয়নি বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে শিল্প প্লট বরাদ্দে নীতিমালা তৈরি করতে পূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক যুগের বেশি সময় আগে দেওয়া স্বতঃপ্রণোদিত রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার ওই নির্দেশনাসহ এ রায় দেন। ওই জায়গাগুলো ‘মিডিয়া প্লট’ নামে পরিচিত।
রায়ে বলা হয়, শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন প্রচারের কোনো বিধান নেই। তবে জনগণের এ ধরনের শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে আবেদন দাখিল করার ব্যবস্থা থাকা উচিত। ভবিষ্যতে শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আগে একটি নীতিমালা করতে হবে, যেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
‘সড়ক প্রকল্প রাতারাতি হয়ে গেল শিল্প প্লট’ শিরোনামে ২০১০ সালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদ নজরে এলে হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ ২০১২ সালের ৯ মে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ তদন্তের আদেশ দেন। এরপর বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আদালতে তলব করা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। স্বতঃপ্রণোদিত রুলে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হয় মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)।
পরবর্তী সময়ে বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে রুল শুনানির জন্য বিষয়টি আসে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ২৪ অক্টোবর দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। প্লট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস, আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী, আব্দুল আলীম মিয়াসহ প্রমুখ শুনানিতে অংশ নেন। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী নজরুল ইসলাম খন্দকার ও সুকুমার বিশ্বাস।
ভবিষ্যতে শিল্প প্লট বরাদ্দে নীতিমালা তৈরি করতে পূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রায়ের পর তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৬ সালে ওই ২৪ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তখন শিল্প প্লটগুলো বরাদ্দের নীতিমালা ছিল না, ছিল বরাদ্দ কমিটি। বরাদ্দপ্রাপ্তের কেউ কেউ চুক্তির শর্ত অনুসারে এখনো স্থাপনা নির্মাণ করেননি। প্লটমালিকেরা লিখিত জবাবে নির্মাণকাজ শুরু না করার কারণ উল্লেখ করেছেন। যাঁরা এখনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেননি, তাঁদের যৌক্তিক কারণ বিবেচনা করে তদন্ত করে নোটিশ দিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম শেষ করবেন বলে রায়ে বলা হয়েছে।
অবশ্য প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত তিন মালিকের আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, যে সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তখন বিদ্যমান যে বিধান ছিল—এ অনুযায়ী প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে এসেছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে যাতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, সে জন্য বিধিমালা তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্লট বরাদ্দ পেলেও বরাদ্দপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন স্থাপনা তৈরি করতে পারেননি। আগামী দুই বছরের মধ্যে প্লটগুলোতে শিল্প স্থাপনা নির্মাণ শুরু করতে হবে বলা হয়েছে। এমন পর্যবেক্ষণসহ হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন।