জাপানের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পেলেন প্রথম আলোর সাংবাদিক মনজুরুল হক
জাপানে কর্মরত বিদেশি কোনো সাংবাদিক হিসেবে প্রথমবারের মতো দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন প্রথম আলোর টোকিও ব্যুরোপ্রধান মনজুরুল হক। জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক জানাবোঝা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বর্ষীয়ান এই সাংবাদিককে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
জাপান সরকার প্রতিবছর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে জাপানি এবং বিদেশিদের মধ্যে কিছু ব্যক্তিকে সম্মানিত করে থাকে। এটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মাননা হিসেবে পরিচিত।
আজ শুক্রবার টোকিওতে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিথি ভবন ইকুরা হাউসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া এ বছরের জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
সাধারণত একক এবং সংগঠন—এই দুই বিভাগে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। একক ব্যক্তিদের মধ্যে সংস্কৃতি, প্রকৌশল, চিকিৎসা, বাণিজ্য, অর্থনীতি—এ রকম নানা ক্ষেত্রে অবদান রেখে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা রাখা লোকজনকে সম্মানিত করা হয়। এর পাশাপাশি কিছু সংগঠন, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তাও এই সম্মাননা পেয়েছেন।
তবে এবারই প্রথম জাপানে কর্মরত কোনো বিদেশি সাংবাদিককে এই সম্মাননা প্রদান করা হলো। বিশ্বের প্রায় সব প্রধান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি থাকা জাপানে বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর সাংবাদিক এই সম্মাননা লাভ করলেন।
স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় অনুষ্ঠান শুরু হলে প্রথমেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া স্বাগত বক্তব্য দেন। জাপানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক জোরদারে অনন্য ভূমিকা রাখার জন্য তিনি সম্মাননাপ্রাপ্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মাননাপ্রাপ্তদের মধ্যে যাঁরা টোকিওতে অবস্থান করছেন, তাঁদের প্রত্যেকের হাতে একে একে সনদ তুলে দেন। সনদ প্রদান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সবার সঙ্গে ছবি তোলেন। সবশেষে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাংবাদিক মনজুরুল হকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি তাঁর আরোগ্য কামনা করেন এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি অবদান রেখে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
১৯৯৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম আলো প্রকাশিত হওয়ার প্রথম দিন থেকেই মনজুরুল হক পত্রিকার জাপান প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সংবাদ সংগ্রহের সূত্রে জাপানের ৪৭টি জেলার সব কটি তিনি ভ্রমণ করেছেন, সাক্ষাৎ করেছেন সম্রাট থেকে শুরু করে দেশের নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদ, শিল্প, সংস্কৃতি ও চলচ্চিত্রের পরিচিত ব্যক্তিত্ব, হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া হিবাকুশা নামে পরিচিত প্রজন্মের লোকজন ছাড়াও একেবারে সাধারণ মানুষজনের সঙ্গে। তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পাঠানো তাঁর সংবাদ ও প্রতিবেদন প্রথম আলো নিয়মিতভাবে প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া জাপানে বিভিন্ন সময় আয়োজিত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমাবেশ ও সম্মেলনের পাশাপাশি দেশের ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও অন্যান্য অঙ্গনের সংবাদ তিনি পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য। মনজুরুল হক মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
মনজুরুল হক নেতৃত্ব দিয়েছেন বিদেশি সাংবাদিকদের ক্লাব ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাব জাপানেরও (এফসিসিজে)। ২০০৯ সালে তিনি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং এক বছর মেয়াদি সেই দায়িত্ব সম্মানের সঙ্গে পালন করেন। এ ছাড়া জাপানের নেতৃস্থানীয় দৈনিক মায়ানিচি শিম্বুনে ২০২১ সাল থেকে তিনি লিখেছেন নিজস্ব কলাম। এ রকম বহুমুখী অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বছর তাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মাননার জন্য মনোনীত করে।
সম্মাননা পেয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মনজুরুল হক বলেন, ‘দীর্ঘকাল ধরে আমি নিরবচ্ছিন্নভাবে জাপানে সাংবাদিকতার কাজ করে গেলেও প্রথমবারের মতো জাপানে কর্মরত বিদেশি সাংবাদিক হিসেবে এই সম্মান লাভ আমার কাছে ছিল অপ্রত্যাশিত।’
মনজুরুল হক বলেন, ‘সনদ গ্রহণের এই জাঁকজমক আয়োজন দেখে আমার মনে হয়েছে, যতটা না ভূমিকা রেখেছি, তার চেয়ে বেশি সম্মান আমাকে দেখিয়েছে জাপান সরকার। এতে আমি অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং এ কাজে নিজেকে আরও নিয়োজিত করার কথা ভাবছি।’