চট্টগ্রাম নগরে খাল-নালা অরক্ষিত, দুর্ঘটনা ঘটলে বসে অস্থায়ী বেষ্টনী

তিন বছর আগে এই খালে দুজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এখনো দেওয়া হয়নি নিরাপত্তাবেষ্টনী। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেট এলাকার চশমা খালেছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের আছদগঞ্জ এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কলাবাগিচা খাল। এটি শুঁটকিপট্টি এলাকায় গিয়ে চাক্তাই খালের সঙ্গে মিলেছে। এই খাল পার হওয়ার জন্য জরাজীর্ণ একটি সেতু রয়েছে। তবে পুরো খালের পাশে নেই কোনো নিরাপত্তাবেষ্টনী। গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর জলাবদ্ধতার কারণে এখানে পড়ে মৃত্যু হয় আজিজুল হাকিম নামের এক যুবকের।

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসী দড়ি দিয়ে অস্থায়ী বেষ্টনী তৈরি করে রেখেছেন। তাতেও দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, বৃষ্টির সময় এই খাল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পা পিছলে পড়লে পানির স্রোতে ভেসে যাবে যে কেউ। এলাকার ছোট শিশুরা খালের পাড়ে খেলা করে। বেষ্টনী না থাকায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা এটি প্রথম নয়। গত এক মাসে আজিজুল হাকিমসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে নগরের তিনটি খালে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর জানান, এই খালের পাশে বেষ্টনী নির্মাণের জন্য পাঁচ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব মেয়রের কাছে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।

খালে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা এটি প্রথম নয়। গত এক মাসে আজিজুল হাকিমসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে নগরের তিনটি খালে। এর মধ্যে ১১ জুন বিকেলে চাক্তাই খালের স্লুইসগেট–সংলগ্ন এলাকায় নিখোঁজ হয় অজ্ঞাতনামা এক শিশু। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর তার লাশ পাওয়া যায় পাশের রাজাখালী খালে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, অস্থায়ী বাঁশের বেষ্টনী স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

এর আগে ৯ জুন আগ্রাবাদ এলাকার নাসির খালে পড়ে মারা যায় সাইদুল ইসলাম নামের সাত বছর বয়সী এক শিশু। ওই এলাকায় এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

নগরে উন্মুক্ত খাল-নালাগুলোর পাশে বেষ্টনী দেওয়ার কথা বারবার বলে আসছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তবে এতেও টনক নড়েনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)। সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় প্রতিবারই খাল-নালায় বেষ্টনীর বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে তা কেবল আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ। মৃত্যুর ঘটনার পর শুধু অস্থায়ী বেষ্টনী দেওয়া হয়।

প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর তার লাশ পাওয়া যায় পাশের রাজাখালী খালে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, অস্থায়ী বাঁশের বেষ্টনী স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

তিন বছরে হয়নি বেষ্টনী

২০২১ সালের জুনে নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় চশমা খালে পড়ে অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। এ ঘটনার প্রায় তিন বছর কেটে গেলেও এই খালের মেয়র গলির পাশে এখনো দেওয়া হয়নি বেষ্টনী। ফলে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করেন বাসিন্দারা। বৃষ্টিতে খালের পাশের সড়কটি পানিতে ডুবে যায়। তখন সড়কটিও দেখা যায় না।

একই বছর ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুরে চশমা খালে পা পিছলে পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। তাঁর মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। গত তিন বছরে চট্টগ্রাম নগরে খালে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে ২০২১ সালে পাঁচজন, ২০২৩ সালে দুজন ও ২০২৪ সালে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া গত বছরের ৯ মার্চ সন্ধ্যায় লালখান বাজার সড়কের এক পাশে নালার খোলা অংশের মুখে থাকা রডে হোঁচট খেয়ে নালায় পড়ে যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী নামের এক তরুণ। তাঁর পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙেছে।

সম্প্রতি নগরের চান্দগাঁও থানা, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মুরাদপুর, চকবাজার, মেহেদিবাগ, চটেশ্বরী মোড়, দুই নম্বর গেট, রহমান নগর, মেয়র গলি, আলফালাহ গলি, আগ্রাবাদ, রঙ্গীপাড়া, চাক্তাই, আছদগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার নালার বেশির ভাগ অংশে এখনো স্ল্যাব বসানো হয়নি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া খালের পাড় রয়েছে প্রায় ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। এসবের ১০ শতাংশ নালাতেও নিরাপত্তাবেষ্টনীর কাজ হয়নি। তবে করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, তাঁরা অধিকাংশ স্থানেই স্ল্যাব বসিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চশমা খালসহ সব খালের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে দেয়াল করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব জায়গায় স্ল্যাব উঠে গেছে, সেগুলো বসিয়ে দেওয়া হবে।

তবে সম্প্রতি নগরের চান্দগাঁও থানা, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, মুরাদপুর, চকবাজার, মেহেদিবাগ, চটেশ্বরী মোড়, দুই নম্বর গেট, রহমান নগর, মেয়র গলি, আলফালাহ গলি, আগ্রাবাদ, রঙ্গীপাড়া, চাক্তাই, আছদগঞ্জ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার নালার বেশির ভাগ অংশে এখনো স্ল্যাব বসানো হয়নি। খালে নেই নিরাপত্তাবেষ্টনী। যেকোনো মুহূর্তে আবারও দুর্ঘটনা ঘটার আতঙ্ক নিয়েই চলাফেরা করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চশমা খালসহ সব খালের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে দেয়াল করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া যেসব জায়গায় স্ল্যাব উঠে গেছে, সেগুলো বসিয়ে দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরী