নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন ধরনের ‘মিডিয়া পরিবেশ’ তৈরি করা জরুরি: মাহফুজ আনাম
বাংলাদেশের ৫৩ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে কোনো সরকারই প্রকৃত অর্থে সমালোচনামূলক সাংবাদিকতা গ্রহণ করেনি, এমন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে নতুন বাংলাদেশে স্বাধীন ও সমালোচনামূলক গণমাধ্যম মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। আজ দুপুরে র্যাডিসন ব্লু হোটেলে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, রেডিও-টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এ সভার আয়োজন করে ‘তারেক রহমান-স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটি’। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
মাহফুজ আনাম বলেন, সত্যিকার অর্থে নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে নতুন ধরনের মিডিয়া পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। তাঁর মতে, তারেক রহমানের জন্য এটি একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় সময়। কারণ, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে গভীর। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এই মুহূর্তে একধরনের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থার মধ্যে আছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনার কথা তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘বাংলাদেশের ৫৩ বছরের বয়সে কখনো কোনো মিডিয়া অফিসে আগুন দেওয়া হয়নি। প্রথমবারের মতো প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার অফিসে আগুন জ্বালানো হয়েছে। কেন? আমরা কী অপরাধ করেছি? এটা সমস্ত মিডিয়ার প্রশ্ন করা উচিত।’
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে একটি সম্মানজনক ও দায়িত্বশীল সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন মাহফুজ আনাম। তিনি আরও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শুধু প্রথম ধাপ, কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সমালোচনামূলক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ‘আপনি ক্ষমতায় না থাকলে মিডিয়ার প্রতি উদার থাকা সহজ, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে আপনি সমালোচনা কতটা গ্রহণ করেন—সেটাই আসল পরীক্ষা,’ বলেন তিনি।
বিএনপির কাছে পরিবর্তনের প্রত্যাশা রেখে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের ৫৩ বছরের রাজনীতিতে বড় অভিজ্ঞতা হলো কোনো সরকারই কখনো সমালোচনামূলক সাংবাদিকতাকে গ্রহণ করেনি। আমি আশা করব, নতুন বাংলাদেশে বিএনপি সেই জায়গায় পরিবর্তন আনবে।’
সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, এটি শুধু সাংবাদিকতার স্বাধীনতার বিষয় নয়, বরং সুশাসনের জন্য অপরিহার্য। তাঁর ভাষায়, ‘আপনি যদি সত্য কথা শুনতে না চান, তাহলে আপনি ভুল করবেন এবং সেই ভুল বারবার করবেন।’
সাংবাদিকতায়ও ভুল হতে পারে উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, সেই ভুল ধরিয়ে দিলে তা সংশোধনের দায়িত্ব গণমাধ্যমের। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি দেখান কোনো রিপোর্ট তথ্যভিত্তিক নয় বা ভুল, আমরা ক্ষমা চাইব। ডেইলি স্টার সবচেয়ে বেশি ক্ষমা চেয়েছে। কারণ, আমরা ভুল স্বীকার করি।’
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।