গানের সুরে নামল যবনিকা
অনেকে ছবি তুললেন উত্তাল দিনগুলোর স্মৃতি ধরে রাখতে। শহীদদের স্মৃতি নিদর্শনের সামনে দাঁড়িয়ে কতজনের চোখ থেকে ঝরল অশ্রুবিন্দু! ক্ষোভ আর প্রতিবাদের কথা লিখলেন কেউ কেউ মন্তব্যের খাতায়। সব দেখে-শুনে অনেকে বললেন, দেশ থেকে চিরতরে ফ্যাসিবাদের বিদায়ের জন্য প্রতিরোধ-প্রতিবাদের শক্তি জাগিয়ে রাখতে হবে।
জুলাই-জাগরণ প্রদর্শনীর শেষ দিনে দর্শকদের ছিল এমন প্রতিক্রিয়া। প্রথম আলোর আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীসহ আনুষঙ্গিক বিপুল কর্মযজ্ঞের সমাপনী হলো গানে গানে।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে বেলা তিনটায় দ্বারোন্মোচনের পর থেকেই বিপুল সংখ্যায় দর্শকেরা আসতে শুরু করেছিলেন। তাঁরা ঘুরে ঘুরে অভ্যুত্থানের রক্ত, মৃত্যু, প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর ঘটনাবলি ধরে রাখা আলোকচিত্র দেখেন। দেয়ালে ঝোলানো বিশালাকার এসব ছবির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি ও সেলফি তুলেছেন।
ছবি ছাড়াও ছিল শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, নাঈমা সুলতানা, শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ, মাহমুদুর রহমান সৈকত ও শিশু জাবির ইব্রাহীমের পরিচিতিসহ তাঁদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী। দর্শকের অনেকে এসব স্মৃতি নিদর্শনের সামনে এসে আবেগে কেঁদেছেন।
আন্দোলন দমন করতে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী বুলেটের খোসা, ছররা গুলি, কাঁদানে গ্যাসের সেল, গ্রেনেডের পিন—এসবও ছিল প্রদর্শনীতে। সেগুলো দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাহনুমা আদনিন বললেন, ‘ছররা গুলি এই প্রথম দেখলাম, আর ছবিতে দেখলাম এসব গুলিতে কেমন করে ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন আন্দোলনকারীরা।’ মা সানজিদা আক্তারের সঙ্গে সিদ্ধেশ্বরী থেকে আসা এই শিক্ষার্থী বললেন, গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রদর্শনী ও বিদ্রোহে-বিপ্লবে প্রামাণ্যচিত্র যেন আন্দোলনের দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ছবি, নিদর্শন, তথ্য—সবকিছু এখানে একসঙ্গে আছে। এটা প্রথম আলোর খুব ভালো উদ্যোগ।
অভ্যুত্থানকে নিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিকতাকে অবলম্বন করে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছিল। গত ২৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া আট দিনের এই প্রদর্শনীর কিউরেটর ছিলেন শিল্পী আনিসুজ্জামান সোহেল। সহযোগিতায় ছিল প্রাইম ব্যাংক ও সৌজন্যে শিল্পকলা একাডেমি।
প্রদর্শনীতে ছবির পাশাপাশি ছিল সেই সময়ের প্রথম আলো পত্রিকার বিভিন্ন পাতার বড় আকারে ডিজিটাল প্রিন্ট। একটি কক্ষে ছিল সাভার গণহত্যা নিয়ে তৈরি বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। এসবের পাশাপাশি ছিল শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে শিল্পী শহীদ কবীরের শিল্পসৃষ্টির প্রক্রিয়ার ভিডিও চিত্র।
কাল প্রদর্শনী দেখে অনেক দর্শক তাঁদের অনুভূতির কথা লিখেছেন মন্তব্যের খাতায়। আনোয়ারুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী লিখেছেন, ‘ধিক্কার জানাই আওয়ামী লীগকে। ধিক আওয়ামী পুলিশ, যারা ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছে, ধিক তাদের!’
সমাপনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাশিল্পী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের দিনগুলোকে যেন আমরা ভুলে না যাই, সে জন্য প্রথম আলো এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।’ উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম এ চৌধুরী।
সূচনা বক্তব্যের পর বিদ্রোহে-বিপ্লবে প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পরে গানের পালা শুরু হয়েছিল কাকতাল ব্যান্ডের পরিবেশনা দিয়ে। ভোকালিস্ট আসিফ ইকবাল গেয়েছেন ‘বিবেক কোথায়’, ‘চড়কি’, ‘আবার দেখা হলে’সহ কয়েকটি গান। পরে সমাপনী টানতে আসেন শিল্পী আহমেদ হাসান সানি। তিনি গেয়েছেন ‘ক্রন্দনরত জননী’, ‘প্লাস্টিকের পুতুল’, ‘এ শহর’ এবং কবির সুমনের গান ‘সাড়া দাও উদাসীন থেকো না, সাড়া দাও’।