সবকিছুর বাণিজ্যিকীকরণের চিন্তা একধরনের সংকীর্ণতা: শেখ বশিরউদ্দীন
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা পর্যটনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, ‘সবকিছুকেই বাণিজ্যিকীকরণ করতে হবে, অর্থনীতির মানদণ্ডে চিন্তা করতে হবে—এটা একধরনের সংকীর্ণতা। আমি এই সংকীর্ণতায় বিশ্বাস করি না।’
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার আগারগাঁও পর্যটন ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পযর্টন উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এদিন সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন শেখ বশিরউদ্দীন। এ সময় পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রাটি পর্যটন ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে নির্বাচন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, সরকারি সংগীত কলেজ ও বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন–সংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পর্যটন ভবনে এসে শেষ হয়। অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল সাইকেল শোভাযাত্রা, সিটি ট্যুর ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবেশগত ও আর্থসামাজিক পরিবর্তনে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিতে এ বছর পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই উন্নয়নে পর্যটন’।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্য ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, অর্থনীতিও গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু নির্মলতা, নিরাপত্তা, পারিবারিক আনন্দ ও সামগ্রিকতার অনুভূতি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই নিজেকে সন্তুষ্ট করা প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। একত্রে ভ্রমণ ও আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ে।
সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে পর্যটকদের জন্য একটি ‘কোড অব কনডাক্ট (আচরণবিধি)’ প্রণয়ন করা হয়েছে উল্লেখ করে পযর্টন উপদেষ্টা বলেন, পর্যটন মহাপরিকল্পনার কাজের নিদর্শন ভবিষ্যতে চোখে পড়বে। ভ্রমণকে নিরাপদ ও আনন্দময় করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘের পর্যটনবিষয়ক মহাসচিব জুরাব পলোলিকাশভিলি বলেন, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হলে পর্যটন একটি কল্যাণকর শক্তিতে পরিণত হতে পারে। একসঙ্গে কাজ করে পর্যটনকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষার হাতিয়ারে রূপান্তর করা সম্ভব।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা বলেন, পর্যটন এমন একটি খাত, যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, বৈদেশিক মুদ্রা আনে। উজ্জ্বল করে দেশের ভাবমূর্তি। এখন পর্যটন কেবল ভ্রমণ বা বিনোদন নয়, একটি টেকসই রূপান্তরের মাধ্যম।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, পর্যটন এখন সারা বিশ্বে একটি উদীয়মান শিল্প। বাংলাদেশেও শিল্পটি বর্ধনশীল পর্যায়ে রয়েছে। একসময় পর্যটন ব্যক্তি বা ভ্রমণকারীকেন্দ্রিক ছিল। কিন্তু এখন এর সঙ্গে অনেকে জড়িত হয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাইনুল হাসান বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত লোকবল নিয়েও তাঁরা কাজ করছেন। তবে পর্যটক বাড়ায় চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। পর্যটনকে এগিয়ে নিতে যোগাযোগব্যবস্থা, আবাসন ও নিরাপদ খাবারেও নজর দিতে হবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনেক প্রসিদ্ধ। পর্যটন খাতে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। কমিউনিটি ট্যুরিজম তৈরির মাধ্যমে নারীদের জড়িত করা যেতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান বলেন, পর্যটনের গুরুত্ব বুঝে বাংলাদেশ সরকার একে শিল্পনীতির অন্তর্ভুক্ত করেছে। শুধু তা–ই নয়, ১২টি সেক্টর এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
অনুষ্ঠানে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য আচরণবিধি এবং দেশে পর্যটন–সুবিধা ও তথ্যসম্পর্কিত দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিরা, পর্যটনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।