২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এবার দুটি শিশুই বেঁচে আছে, এটি অবশ্যই সাফল্য

ওমর ফারুক ও আবু বকর যমজ ভাই। বুক ও পেট জোড়া লাগানো অবস্থায় গত জুলাইয়ে তাদের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়েছে। গত বুধবার তারা বাড়ি (গোপালগঞ্জ) ফিরেছে। দুই শিশুর সফল অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে চিকিৎসক দলের প্রধান ছিলেন বিএসএমএমইউর শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম জাহিদ হোসেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোশতাক আহমেদ।

জাহিদ হোসেন
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কেমন আছেন?

জাহিদ হোসেন: ভালো আছি।

বাবা–মায়ের কোলে দুই শিশু আবু বকর ও ওমর ফারুক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ৪ অক্টোবর
ছবি: সাজিদ হোসেন
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: শিশু দুটি এখন কেমন আছে, খোঁজ নিয়েছিলেন?

জাহিদ হোসেন: ওরা ভালোই আছে। ওদের পরিবার ফোন করে জানিয়েছে।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: শিশু দুটির মা–বাবার সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?

জাহিদ হোসেন: সরাসরি আমার সঙ্গে কথা হয়নি। আমাদের চিকিৎসক দলের সঙ্গে কথা হয়েছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: শিশু দুটির মা চায়না বেগম ও বাবা আল আমিন শেখ সন্তানদের কোলে পেয়ে কী বলেছিলেন?

জাহিদ হোসেন: তাঁরা খুবই খুশি ও উচ্ছ্বসিত হয়েছেন। আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: খবরটি গণমাধ্যমে এসেছে। আপনাদের কেউ কিছু বলেছেন?

জাহিদ হোসেন: অনেকেই অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিদেশে থাকা আমার বন্ধুরাও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এ ধরনের অস্ত্রোপচার তো কম হয়...।

জাহিদ হোসেন: এগুলো তো রেয়ার (বিরল) অস্ত্রোপচার।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আগে হয়েছিল?

জাহিদ হোসেন: ২০১০ সালে বিএসএমএমইউতে এ রকম জোড়া লাগানো দুটি শিশুকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, তখন একটি শিশু বাঁচলেও আরেকটি বাঁচেনি। এবার দুটি শিশুই বেঁচে আছে। এটি অবশ্যই একটি সাফল্য। এটি আমাদের বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুনামেরও বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এটি একটি মাইলফলক।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: শিশু দুটির খোঁজ কীভাবে পেলেন?

জাহিদ হোসেন: তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। শিশু দুটির পরিবার বিএসএমএমইউর উপাচার্য মো. শারফুদ্দিন আহমেদের একান্ত সচিবের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। তারপর আমি বলেছি, নিয়ে আসেন, ভর্তি করি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: চিকিৎসক দলে আর কে কে ছিলেন?

জাহিদ হোসেন: অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন, কে এম দিদারুল ইসলাম, সুশংকর কুমার মণ্ডল, সাইফুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, অবেদনবিদ অধ্যাপক দেবাশিস বণিক ও অধ্যাপক দেবব্রত বণিকসহ কয়েকজন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনার কি আগে এমন অস্ত্রোপচারের অভিজ্ঞতা ছিল?

জাহিদ হোসেন: আগেই বলেছি, ২০১০ সালে এ রকম একটি অপারেশন (অস্ত্রোপচার) হয়েছিল। তখন আমি জুনিয়র (কনিষ্ঠ) চিকিৎসক হিসেবে ওই চিকিৎসক দলে ছিলাম।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আর কোনো জোড়া লাগানো শিশু কি হাসপাতালে ভর্তি আছে?

জাহিদ হোসেন: এখন জোড়া লাগানো দুটি শিশু ভর্তি আছে। তাদের পিঠের অংশে জোড়া লাগানো। তাদেরও অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের মূল অস্ত্রোপচারটি আরও কিছুদিন পরে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: যে শিশু দুটি বাড়ি গেছে, ওরা কি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে?

জাহিদ হোসেন: ওরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। কোনো অসুবিধা নেই। সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জোড়া লাগা অবস্থায় শিশুর জন্ম কেন হয়?

জাহিদ হোসেন: কেন হয় তার প্রকৃত কারণ আজ পর্যন্ত জানা যায়নি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জোড়া লাগানো শিশুদের বিষয়ে পরামর্শ কী?

জাহিদ হোসেন: জোড়া লাগানো শিশু বিভিন্ন ধরনের আছে। আমাদের কাছে এলে আমাদের যতটুকু সক্ষমতা আছে, তার মধ্যে থেকে চিকিৎসা করব। কয়েক বছর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও এ ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। তাই যেখানে সব সুবিধা আছে, সেখানে এ ধরনের অস্ত্রোপচার করা উচিত। কারণ, এটি কেবল শিশু সার্জারি বিভাগের একার পক্ষে সম্ভব নয়; বিভিন্ন বিভাগের সহযোগিতা নিতে হয়। হাসপাতালে ওই ধরনের সহযোগিতা করার মতো বিভাগও থাকতে হবে।