প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের খণ্ডিতাংশ বিভ্রান্তিমূলক ক্যাপশন দিয়ে প্রচার

প্রথম আলোর এ প্রতিবেদনের খণ্ডিত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের নামের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর সেখানে এমন কিছু নাম পাওয়া যায়, যাঁদের মৃত্যু জুলাই শহীদ হিসেবে সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া সংজ্ঞায় পড়ে না। গত ১৫ সেপ্টেম্বর এমন ৫২ জনকে নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো।

‘জমির বিরোধে খুন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তবু তাঁরা জুলাই শহীদ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ–সংক্রান্ত ফটোকার্ড ও ভিডিও এক্সপ্লেইনার প্রকাশ করা হয়।

সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, প্রথম আলোর সংবাদ ও এক্সপ্লেইনারের খণ্ডিত অংশ বিভ্রান্তিমূলক ক্যাপশন ও থাম্বনেইল দিয়ে ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে। সর্বশেষ সোমবার ‘বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক’ নামে একটি ফেসবুক পেজে এমন একটি খণ্ডিত ভিডিও পোস্ট করা হয়। ওই ভিডিওতে ক্যাপশন ও থাম্বনেইলে লেখা হয়, ‘মানুষ হত্যার গুজব ছড়িয়ে হয়েছিল জুলাই আন্দোলন’। ভিডিওটির মধ্যে আরও লেখা হয়, ‘প্রথম আলো সংবাদ বর্ণনা করছেন জুলাইয়ে কীভাবে গুজবের কারখানা নির্মাণ করা হয়।’

বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন দিয়ে প্রকাশ করা ভিডিওটি মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ।

অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনের খণ্ডিত অংশ বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের বিষয়টি প্রথম আলোর নজরে এসেছে। সজীব ওয়াজেদ ও বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক পেজে ভিডিওটি বুধবার আর দেখা না গেলেও ক্যাপশন রয়েছে। অন্য নানা পেজে ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে।

এমন ভিডিও ছড়াচ্ছে ফেসবুকে, যেখানে প্রথম আলোর খণ্ডিত তথ্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে অপপ্রচার চলছে

প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ বলছে, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটি বিকৃতভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। ‘মানুষ হত্যার গুজব ছড়িয়ে জুলাই আন্দোলন হয়েছে’—প্রতিবেদনের কোথাও এমন তথ্য নেই। বরং যাঁদের মৃত্যু জুলাই শহীদ হিসেবে সরকারের নির্ধারিত সংজ্ঞায় পড়ে না, সেই নামগুলোই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এ শহীদের সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। বলা হয়েছে, শহীদ হিসেবে গণ্য হবেন তাঁরা, যাঁরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে তৎকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা ওই সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের আক্রমণে মারা গেছেন।

শহীদের সংজ্ঞায় পড়েন না অথবা ভুলভাবে নাম এসেছে—প্রজ্ঞাপনে থাকা এমন আটজনের নাম গত ২ আগস্ট বাদ দেয় সরকার। এখন প্রজ্ঞাপনভুক্ত শহীদের সংখ্যা ৮৩৪।

এদিকে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রজ্ঞাপনে থাকা ৫২ জনের তথ্য পুনরায় যাচাই করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। তথ্যগুলো যাচাই করতে সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে সংশ্লিষ্ট জেলার জুলাই যোদ্ধা ও শহীদেরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে আহত বা শহীদ হয়েছেন কি না, তা যাচাই করতে বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির সঙ্গে প্রথম আলোর প্রতিবেদনের অনুলিপি এবং ওই ৫২ জনের তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন