দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মূর্তি ভাঙা শুরু হয়ে গেছে, অভিযোগ রানা দাশগুপ্তের

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের গণ-অনশন ও গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন কর্মসূচির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আসন্ন। কিন্তু এরই প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দিরে হামলা শুরু হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশগুপ্ত এ অভিযোগ করেন। শহীদ মিনারে সংখ্যালঘুদের দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে গণ-অনশন ও গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

আজ শুক্রবার সকাল ছয়টায় শুরু হওয়া এই গণ-অনশন ও গণসমাবেশ কর্মসূচি রোববার সকাল ৬টায় শেষ হবে। তারপর ৬ অক্টোবর মহাসমাবেশ করবে তারা।
রানা দাশগুপ্ত অভিযোগ করেন, ‘মূর্তি ভাঙা শুরু হয়ে গেছে। দুর্গাপূজা অক্টোবরে, ইতিমধ্যে বিগ্রহ ভাঙচুর, মন্দিরে হামলা শুরু হয়ে গেছে। এই ভাঙচুর করতে গেলে একজনকে ধরা হয়েছিল, তারপর তাকে বলা হলো সে পাগল। অতীতেও এভাবে যাদের ধরা হয়েছিল, তাদের পাগল বলেছে।’

ফরিদপুরে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং নানা জায়গায় এমন ঘটনা ঘটছে অভিযোগ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো যাতে না ঘটতে পারে, সে জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছি।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বাপর অবস্থা আমাদের জন্য সুখকর নয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল আমরা দেখেছি; ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পূর্বাপর কী হলো, আমরা ভুলি নাই। ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে কী হয়েছিল, আমরা এগুলো ভুলতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘২০১১ সালের পর থেকে আজকে যা চলছে, এটি হচ্ছে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে এই সহিংসতার সাথে যেমনি আমরা যুক্ত হতে দেখেছি, আবার সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে বর্ণচোরা লোকেরা সংখ্যালঘু নিপীড়ন ঘটিয়েছে, যা আমাদের উৎকণ্ঠার কারণ।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, এই কর্মসূচি (গণ-অনশন) শেষ হলে ৬ অক্টোবর মহাসমাবেশ করে পরবর্তী অবস্থান তুলে ধরা হবে।

দুর্গাপূজার সময় কোনো কর্মসূচি না দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘আগামী ২০ অক্টোবর থেকে দুর্গাপূজা শুরু। দুর্গাপূজা চলার সময় কোনো রাজনৈতিক দল দয়া করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবেন না। যারা আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন, আমরা তাদের বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। আর সাড়া না দিলে এটুকুই বলব, ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে তারা অন্তরায় সৃষ্টি করছেন।’

সংখ্যালঘুদের দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলেও উল্লেখ করেন রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জীবনে একধরনের আশাহীনতা ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। এই আশাহীনতা ও আস্থাহীনতা অব্যাহত থাকলে তা আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোটে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না।’

এ সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিম চন্দ্র ভৌমিক।