ডেঙ্গু ‘শক সিনড্রোমে’ বেশি মৃত্যু হচ্ছে

‘শক সিনড্রোমের’ অর্থ হচ্ছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির রক্তচাপ অতিদ্রুত কমে যায়, রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রোগীর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে, রোগী অচেতন হয়ে পড়ে

প্রতিদিন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও। সরকারি হিসাবে, এ বছর ডেঙ্গু রোগী তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজারের কাছাকাছি রোগী। আর মারা গেছেন ৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলো পুরোপুরি প্রস্তুত। প্রয়োজন ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার সকাল আটটা থেকে শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১৫৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে ১৪৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮ জন ভর্তি হয়েছেন।

সরকারি হিসাবে, এর আগের দিনে ভর্তি হয়েছিলেন ১১ জন। সেদিন ছিল শুক্রবার। শুক্রবার রোগী কম ভর্তি হতে দেখা যায়। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছিলেন যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৩৪ জন। জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে ৯৯৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

শনিবার ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২২।

শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, এ বছর ডেঙ্গু ‘শক সিনড্রোমে’ বেশি মৃত্যু হচ্ছে।

এর অর্থ হচ্ছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির রক্তচাপ অতিদ্রুত কমে যায়, রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রোগীর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়ে পড়ে, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এই বছর রোগীদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি দেখা যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক মো. নিজামুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোকে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত কিট আছে। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা নির্দেশিকা তৈরি ও বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য অধিদপ্তর ১০০ শতাংশ প্রস্তুত, দরকার মশা নিয়ন্ত্রণে ১০০ শতাংশ প্রস্তুতি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) শেখ দাউদ আদনান বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা, বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, হাসপাতালে বা বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু রোগী থাকলে তাকে মশারির মধ্যে রাখা নিশ্চিত করতে হবে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক মো. শাহদাত হোসেন বলেন, বর্তমানে ৫৩টি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। খুব শিগগির আরও ৩২টি হাসপাতালের তথ্য এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

সরকারি হিসাবে, এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ২১ জন। এঁদের মধ্যে ২ হাজার ৪৫০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন। মারা গেছেন ২২ জন। আর গতকাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৫৪৯ জন।