নির্বাচন ঘিরে ইন্টারনেট সচল রাখার আহ্বান ৪৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থার

প্রতীকী ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট পরিষেবায় বাধা না দিয়ে প্রবেশযোগ্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সচল ও সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে কিপইটঅন জোট। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন আহমেদের প্রতি আহ্বান এই জানানো হয়েছে।

নিউইয়র্কভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেস নাউয়ের ওয়েবসাইটে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধের অবসান ঘটাতে বিশ্বের ১০৫টি দেশের তিন শতাধিক সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত কিপইটঅন জোট কাজ করে। এই জোটের ৪৩টি সংস্থা বাংলাদশের কর্তৃপক্ষকে নির্বাচনের সময়ে উন্মুক্ত ও নিরাপদ ইন্টারনেট রক্ষা করতে এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বছর হিসেবে বিবেচিত। সেখানে বাংলাদেশেও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে, নির্বাচন চলাকালীন এবং পরে বাংলাদেশের জনগণ যেন উন্মুক্ত, নিরাপদ, এবং প্রবেশযোগ্য ইন্টারনেটসহ অন্যান্য ডিজিটাল যোগাযোগের নিরবচ্ছিন্ন সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউন বা বন্ধের কিছু ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এই জোট বলছে, বাংলাদেশ সরকার ভিন্নমতকে দমন করতে ইন্টারনেট বন্ধ করে থাকে। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সহিংসতার ঘটনাগুলোর কম রিপোর্ট হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে ২০২২ সালে ইন্টারনেট বন্ধের ছয়টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বে পঞ্চম। বিটিআরসি ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিরোধী দলগুলোর একটি রাজনৈতিক সমাবেশের সময় মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। গত অক্টোবর এবং নভেম্বরে বিরোধী দলগুলের বেশ কয়েকটি বিভাগীয় এবং আঞ্চলিক সমাবেশের সময় ফোরজি এবং থ্রিজি ইন্টারনেটের গতি ধীর হয়ে যায়।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ২০১৮ সালেও বাংলাদেশ সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিল। যা সরাসরি গ্রাহকের ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিরোধীদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট সেবায় বাধা দেওয়া হয়েছিল।

সিভিকাস মনিটরের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের উন্মুক্ত জায়গাগুলো বন্ধে কর্তৃত্ববাদী নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে।

এই জোট আরও বলেছে, নির্বাচনের দিন ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও অপপ্রচার বন্ধের জন্য গত নভেম্বরে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে ফেসবুক বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ঘৃণা ছড়ানো, অপপ্রচার এবং ভুল তথ্য সারা বিশ্বেই গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর জন্য বহুল ব্যবহৃত যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ বন্ধ করা কাম্য নয়। বরং জবাবদিহিতা এবং আধেয়ের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে এসব মাধ্যমগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে।

নির্বাচনের সময় ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল যোগাযোগব্যবস্থা সাংবাদিক, গণমাধ্যমকর্মী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের দ্রুত সঠিক তথ্য মানুষকে জানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইন্টারনেট পরিষেবায় বাধা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে হুমকিতে ফেলে।

ইন্টারনেট বন্ধ করা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ মানুষের জীবিকা ও পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে। ইন্টারনেট বন্ধ করা আন্তর্জাতিক আইনেরও লঙ্ঘন বলে এই জোট জানিয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেট পরিষেবা নিশ্চিতে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বও রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি জানিয়েছেন ভোটের দিন ইন্টারনেট ধীরগতি হবে না। কিপইটঅন জোট নির্বাচন কমিশনের এই বক্তব্যকে আমলে নিয়ে বলেছে, নির্বাচনের প্রাক এবং ভোট-পরবর্তী সময়েও যেন এই প্রতিশ্রুতি বজায় থাকে।