ভোটে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিলে কারাদণ্ডের প্রস্তাব
জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনে কী কী সংশোধনী থাকবে, তা চূড়ান্ত করা হবে।
প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশনের কার্ডধারী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কেউ এই অপরাধ করলে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় জাতীয় নির্বাচনে আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার বিষয়টি আগের মতো বহাল রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানেই এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক।
দুপুরের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আজকের বৈঠকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে জানান তিনি। এর মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়ে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এখন কোনটি থাকবে, তা সরকার ঠিক করবে।
এত দিন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগেই ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি বিল) জমা দিতে হতো। এখন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এসব বিলের কপি জমা দেওয়ার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর প্রার্থীদের টিআইএন সনদ এবং আয়করের রসিদ জমা দিতে হবে।
বিদ্যমান আরপিওতে কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার প্রস্তাব তৈরি করে গত বছরের অক্টোবরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল ইসি। যেসব সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ফলাফল প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা, প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে বা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে শাস্তির বিধান, দলের সর্বস্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া, দায়িত্বে অবহেলায় কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতা বাড়ানো, প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ভোট গণনার বিবরণী প্রার্থী ও তাঁর এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি) পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দেওয়া ইত্যাদি। আইন মন্ত্রণালয় এসব প্রস্তাব ভেটিং (পরীক্ষা) করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়, যা নিয়ে আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, আজকে আইনের সংশোধনীর বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কী কী সংশোধনী থাকবে, তা পরবর্তী সময়ে চূড়ান্ত করা হবে।
এ বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের একেবারে শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের কথা রয়েছে। তার আগেই আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নিল সরকার।