নারীর জন্য নিরাপদ নগরীর দাবিতে ১৬ দিনের প্রচারাভিযানে একশনএইড

একশনএইডের প্রচারাভিযান উপলক্ষে আজ বুধবার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনাছবি : প্রথম আলো

নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য নিরাপদ নগরী গড়ে তোলার দাবিতে ১৬ দিনব্যাপী জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ প্রচারাভিযান শুরু করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়ে পালিত এই ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে ‘নিরাপদ নগরী, নির্ভয় নারী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন শহরে এবং স্থানীয় পর্যায়েও উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছে সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

কর্মসূচির শুরুতে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টোরিজ অব কারেজ’ শীর্ষক প্রদর্শনী। এতে নারীদের সাহস এবং প্রতিকূলতা মোকাবিলার গল্পগুলো তুলে ধরা হয়। এরপর চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘একোজ অব হার লাইফ’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। নাটকটিতে গণপরিবহন, জনপরিসর এবং সেবাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের দৈনন্দিন হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে নগরীতে অনলাইন ও অফলাইনে নারীরা কেমন নিরাপদ আছেন—সে বিষয়টি তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি টিমের লিড মরিয়ম নেছা।

নিরাপদ নগরী ক্যাম্পেইনের আওতায় একশনএইড বাংলাদেশের পরিচালিত গবেষণার তথ্য উল্লেখ করেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির। তিনি বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে ৪২ শতাংশ নারী তাঁদের অনলাইন উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে। ৬৩ শতাংশ নারী ভয় বা আশঙ্কা নিয়ে বাইরে বের হন এবং গণপরিবহনে ২২ শতাংশ নারী হয়রানির শিকার হন। এই তথ্যগুলো প্রমাণ করে যে নারীরা অনলাইন বা অফলাইন কোনো ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়।

‘একোজ অব হার লাইফ’ নাটকে উঠে আসে নারীদের দৈনন্দিন হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতার বাস্তব চিত্র
ছবি : প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তানিয়া হক সহিংসতা বাড়ার পেছনে ‘কালচারাল ভায়োলেন্স’ এবং সমাজে এর গ্রহণযোগ্যতাকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘নীরব সাক্ষী’ না হয়ে নগর কমিউনিটিকে হয়রানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, পুরুষ ও ছেলেদের ইতিবাচক সংস্কারের মাধ্যমে সহযোগী হিসেবে না রাখতে পারলে সহিংসতা কমবে না। সরকার ও নাগরিক সমাজকে মিলে প্রতিরোধমূলক কাজে মনোযোগ দিতে হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ইউএনডিপির জেন্ডার টিম লিড শারমিন ইসলাম গণপরিসরে সিসিটিভি নজরদারি জোরদার এবং জেন্ডার বাজেট বৃদ্ধি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ এস এম শফিকুর রহমান নগরীর নকশায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেন্ডার-সংবেদনশীল পরিকল্পনা গ্রহণের অঙ্গীকার করেন। ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার মোছা. ফারহানা ইয়াসমিন দ্রুত রিপোর্ট করার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং থানায় নারী পুলিশদের জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে সহিংসতার শিকার নারীদের সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ফখরুল আরেফিন খান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক জেসমিন আরাসহ অনেকে।