হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ৩১৭৩ জনের যোগদানে বাধা নেই

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ পদে নিয়োগ চূড়ান্তের পর যোগদানসংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার এ আদেশ দেন। ফলে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের (টেক) পদে ৩১৭৩ জনের যোগদানে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী।

ওই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে নিয়োগবঞ্চিত ১৮ জন একটি রিট করেছিলেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ (১০ গ্রেড) পদে যোগদান–সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। প্রজ্ঞাপন অনুসারে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের ২৯ জানুয়ারি (আজ বুধবার) যোগদান করার কথা।

হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে সরকারপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বার আদালত আবেদনটি আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও আইনজীবী এ জেড এম নূরুল আমিন শুনানিতে ছিলেন।

আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে রিটের পক্ষে আইনজীবী কায়সার কামাল শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি নিয়ে সরকারপক্ষের আবেদন নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

পরে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়ায় জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টরের (টেক) পদে ৩১৭৩ জনের যোগদানে বাধা নেই। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য ‘জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর’ পদে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশ চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এর মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের (যাচাই) রিপোর্ট তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নিয়োগপ্রাপ্তদের ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। আর হাইকোর্টে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর ওই নিয়োগের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকারী কর্ম কমিশন (পিএসসি)। ২০২২ সালের ১৮ মার্চ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৫ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত। তবে এ নিয়োগ পরীক্ষায় ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ হয়েছে, এমন অভিযোগ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে গত বছর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পিএসসি গত বছরের ২৬ নভেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। মনোনীত প্রার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীন ১০ম গ্রেডে নিয়োগে সাময়িকভাবে সুপারিশ করা হয়।

তবে ওই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে শওকত আকবরসহ নিয়োগবঞ্চিত ১৮ জন চলতি জানুয়ারি মাসে রিট করেন। ২৩ জানুয়ারি নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদানের জন্য পৃথক প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়, যা নিয়ে সম্পূরক আবেদন দাখিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। শুনানি নিয়ে ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। সেদিন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী এ জেড এম নূরুল আমিন বলেছিলেন, হাইকোর্ট ৪৩টি প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন; ফলে ৩ হাজার ৫৩৪ জনের নিয়োগ কার্যক্রম আটকে গেল।

সরকার পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশ আজ চার সপ্তাহের স্থগিত হয়েছে। আর হাইকোর্টের রুলে যোগদানসংক্রান্ত ২৩ জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনগুলো (৪৩টি) কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। আপিল বিভাগ রুল ছয় সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন।