ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পদ নীল দলের কবজায়

নীল ও সাদা দলের মধ্যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শক্তির ভারসাম্য ছিল। এরপর একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করে নীল দল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

ছাত্রলীগের হাত থেকে আবাসিক হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদ নিজেদের কবজায় রেখেছেন নীল দলের শিক্ষকেরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম হলো এই নীল দল। উপাচার্য থেকে শুরু করে হলের আবাসিক শিক্ষক পদ—সব জায়গায় নীল দলের একচ্ছত্র আধিপত্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট শিক্ষক আছেন ১ হাজার ৯৯২ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রাজনৈতিকভাবে প্রধানত দুটি দলে বিভক্ত। একটি হলো আওয়ামী লীগ সমর্থকদের নীল দল। আরেকটি হলো বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকদের সাদা দল। এই দুই দলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফরম পূরণ করে সদস্য হওয়ার বিষয় নেই। তবে দুই দলেরই কেন্দ্রীয় ও অনুষদভিত্তিক আহ্বায়ক কমিটি আছে। এর বাইরে যাঁরা দলীয় বৈঠকে নিয়মিত অংশ নেন, তাঁদের দলের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সাধারণত প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষকেরা এই পদগুলোতে থাকেন। এই পর্যায়ের শিক্ষকদের সাধারণভাবে বাসা বরাদ্দ পাওয়া কঠিন। কিন্তু আবাসিক শিক্ষক হতে পারলে আবাসন সুবিধা পাওয়া যায়। এই সুবিধার জন্য কনিষ্ঠ শিক্ষকদের অনেকে এই পদ পেতে নীল দলের সঙ্গে যুক্ত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে প্রশাসনে দলীয়করণ কমবেশি সব সময় ছিল। তবে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নীল দল ও সাদা দলের মধ্যে একধরনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ছিল। ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করে নীল দল। অন্যদিকে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা সাদা দলের। এর মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৯০৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন বেশ কিছু ক্ষেত্রে যোগ্যতা শিথিল করে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

গত ১৫ অক্টোবর অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিন। মাকসুদ কামাল নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি এই দলের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সিনেট ও সিন্ডেকেটের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমান সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদও একসময় নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। আরেক সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) সীতেশ চন্দ্র বাছার এই পদে নিয়োগ পাওয়ার পরও কিছুদিন নীল দলের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান নীল দলের প্যানেল থেকে শিক্ষক সমিতির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

নীল দলের প্রভাব শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমিত নয়। গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন উপাচার্য হয়েছেন নীল দল থেকে।

প্রভোস্ট: একজন ছাড়া সবাই ‘নীল’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর প্রভোস্ট (প্রাধ্যক্ষ) পদে নিয়োগ দেন উপাচার্য। ১৯টি হলের প্রভোস্টদের বেশির ভাগ সাবেক উপাচার্য আখতারুজ্জামানের আমলে নিয়োগ পাওয়া। এর মধ্যে শুধু স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান সাদা দলের। বাকিরা সবাই নীল দলের।

এর মধ্যে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট মিহির লাল সাহা নীল দলের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্য। ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট শাহ মো. মাসুম ২০১৭ সালে সিনেট নির্বাচনে নীল দলের প্রার্থী হয়েছিলেন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট আবদুর রহিম নীল দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট মাসুদুর রহমান নীল দলের প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ। শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট লাফিফা জামাল নীল দলের প্যানেল থেকে নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির সদস্য ও সিনেট সদস্য। স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট রফিক শাহরিয়ার নীল দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, অমর একুশে হলের প্রভোস্ট ইশতিয়াক মঈন সৈয়দ এবং বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট আবদুল বাছির নীল দলের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট আকরাম হোসেন নীল দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

এর বাইরে এস এম হলের প্রভোস্ট ইকবাল রউফ মামুন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট মুহাম্মদ জাবেদ হোসেন, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট নিলুফার পারভীন, সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট জাকির হোসেন ভূঁইয়া, কবি জসীমউদ্‌দীন হলের প্রভোস্ট মোহাম্মদ শাহীন খান, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের প্রভোস্ট নাজমুন নাহার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ফারহানা বেগম ও কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরীও নীল দলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

আবাসিক শিক্ষক হতে পারলে আবাসন সুবিধা পাওয়া যায়। এই সুবিধার জন্য কনিষ্ঠ শিক্ষকদের অনেকে এই পদ পেতে নীল দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এখন যাঁরা এসব দায়িত্বে আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নীল দলের সমর্থক।

‘আনুগত্যে’ আবাসিক শিক্ষক

১৮টি হলে আবাসিক শিক্ষক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষক মিলিয়ে পদ আছে ২৬৮টি। এই পদগুলোতে নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টরা। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘দলীয় আনুগত্য’ ও ‘ব্যক্তিগত যোগাযোগ’ বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সাধারণত প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষকেরা এই পদগুলোতে থাকেন। এই পর্যায়ের শিক্ষকদের সাধারণভাবে বাসা বরাদ্দ পাওয়া কঠিন। কিন্তু আবাসিক শিক্ষক হতে পারলে আবাসন সুবিধা পাওয়া যায়। এই সুবিধার জন্য কনিষ্ঠ শিক্ষকদের অনেকে এই পদ পেতে নীল দলের সঙ্গে যুক্ত হন। এখন যাঁরা এসব দায়িত্বে আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই নীল দলের সমর্থক।

নীল দলের সঙ্গে না থাকলে যে এসব সুবিধা পাওয়া যায় না, এটা এখন অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’ বলে মন্তব্য করেন একজন আবাসিক শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অনেকটা প্রথম বর্ষে হলে ওঠার মতো। হলে থাকতে হলে ছাত্রসংগঠনের মিছিল মিটিংয়ে যেতে হবে। নতুন শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এ রকম কড়াকড়ি না হলেও নীল দলের সঙ্গে থাকতে হয়, তাদের বৈঠকের অংশ হতে হয়।’

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীল দল করলেই সব সময় সুবিধা পাওয়া যায়, তা নয়। কে কার ঘনিষ্ঠ, অনেক সময় সেটাও বিবেচ্য হয়ে ওঠে। বিশেষ করে উপাচার্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শিক্ষকেরা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন। আবার উপাচার্য বদলের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। যেমন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের বিদায়ের পর তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিক্ষকদের একটি অংশ অনেক দিন ধরে কোণঠাসা ছিলেন বা আছেন।

বর্তমান প্রভোস্টদের বেশির ভাগ নিয়োগ পেয়েছিলেন আখতারুজ্জামান উপাচার্য থাকাকালে। আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পছন্দ করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে যে মানুষটি প্রশাসনকে আপন মনে করে এগিয়ে আসেন, তাঁকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে আবাসিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা কাজ করে না বলে দাবি করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ অনুষদের ডিন। এই পদে কারা আসবেন, তা ঠিক হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ১০টি অনুষদের ডিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল সব কটিতেই জয়লাভ করে। এর মধ্যে দুটি অনুষদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক সাদা দলের কোনো প্রার্থী ছিল না।

অন্যদিকে গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন বর্জন করে সাদা দল। ফলে সমিতির সব পদেই জয় পান নীল দলের প্রার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব স্তরে নীল দলের শিক্ষকদের পদস্থ করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব সব সরকারের সময়েই ছিল, এখনো আছে; হয়তো ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, আবাসিক শিক্ষকদের সবাই নীল দলের, তা বলা যাবে না। ডিন নিয়োগ করা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেন উপাচার্য। এ ক্ষেত্রে হয়তো মতাদর্শের বিষয়টি দেখা হয়। কারণ, হলগুলো স্পর্শকাতর। যাঁর ওপর উপাচার্য আস্থা রাখতে পারেন, তাঁকেই এই দায়িত্ব দেন। আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রভোস্ট যাঁর ওপর বেশি আস্থাশীল, তাঁকে নিয়োগ করেন।

নীল দলের প্রভাব শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমিত নয়। গত ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন উপাচার্য হয়েছেন নীল দল থেকে। এর বাইরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় অন্তত ১৬ জন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের নেতৃস্থানীয় ছিলেন।

আদর্শ নাকি সুবিধা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনগুলোর ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নীল ও সাদা দলের মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং শক্তির ভারসাম্য ছিল। যেমন বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ ও ২০০৫ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয় পেয়েছিলেন নীল দলের আরেফিন সিদ্দিক ও আখতারুজ্জামান। পরের তিন বছরও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হন নীল দলের প্রার্থীরা। সভাপতি হয়েছিলেন সাদা দল থেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯, ২০১০ ও ২০১৩ সালে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে জয় পেয়েছিলেন সাদা দলের প্রার্থীরা। এরপর থেকে সমিতির নির্বাচনে বড় দুই পদে টানা জয় পেয়ে চলেছেন নীল দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে শুধু ২০২০ সালে একবার সাদা দল থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হয়েছিলেন লুৎফর রহমান।

সাদা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও সাদা দলের বৈঠকে দেড় শ থেকে দুই শ শিক্ষক উপস্থিত থাকতেন। এখন থাকেন ৬০ থেকে ৭০ জন, বেশির ভাগই জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। সহযোগী অধ্যাপকের নিচে তেমন কেউ আর সাদা দলের বৈঠকে আসেন না। গত বছর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট নির্বাচনে সাদা দল ‘প্রভাষক’ শ্রেণিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। ভবিষ্যতে সহকারী ও সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রার্থী দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। সাদা দলের সমর্থকদের অনেকে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় নীল দলে চলে গেছেন বলেও প্রচার আছে।

সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্তরে দলীয়করণ হয়েছে। ভিন্নমতের কেউ নিয়োগ পাননি। কেউ পেয়ে থাকলেও নীল দলের আদর্শ ধারণ করেই আবেদন করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এখন সাদা দলের ভোটার থাকলেও প্রকাশ্য সমর্থক কম। সুযোগ–সুবিধার জন্য বেশির ভাগ শিক্ষকই নীল দলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকতে চান।

অবশ্য নীল দলের নেতারাও স্বীকার করেন যে কেবল আদর্শগত কারণে নয়; অনেকে চাপে বা সুবিধার জন্য নীল দলে ভিড়েছেন, এমন আলোচনা আছে।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য পদে নিযুক্ত হন সীতেশ চন্দ্র বাছার। এর আগপর্যন্ত তিনি নীল দলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নীল দলের প্রতি ‘কমিটেড’ শিক্ষক আছেন প্রায় ৮০০। এর বাইরে এই মতাদর্শের অনেকে আছেন, যাঁরা হয়তো নিয়মিত মিটিংয়ে আসেন না। তাঁর দাবি, দলীয় নিয়োগ দেওয়া হয়নি, সব নিয়োগ হয়েছে মেধার ভিত্তিতে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এই সরকার ক্ষমতায় থাকায় ইতিহাস বিকৃতি সম্পর্কে এই প্রজন্ম জেনেছে। যে কারণে নবীনদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটেছে। তাঁরা বুঝতে পারেন, কারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এ কারণে নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁরা নীল দলে আসেন।

সুযোগ–সুবিধা পাওয়ার আশায় অনেকে সাদা দল থেকে নীল দলে আসার বিষয়ে সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘একদম আসেনি সেটা বলব না। তবে সংখ্যাটা অধিক নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ বলছেন, এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের গবেষণা, মেধা, ডিগ্রি এসব তেমন একটা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। মূল বিবেচনায় থাকে আনুগত্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অনেকগুলো নিয়োগের কারণে শিক্ষক রাজনীতি সংখ্যাগতভাবে একপেশে হয়ে গেছে। নতুন শিক্ষকেরা বুঝতে পারছেন এখানে ভারসাম্য নেই। এখানে সুযোগ–সুবিধার বিষয় আছে। ফলে নতুনেরা ক্ষমতাসীনদের দিকে ঝোঁকেন। তিনি বলেন, ডিন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাই স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয় ব্যক্তিগত আনুগত্য বিবেচনা করে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে দলীয়করণ ছাড়িয়ে তা ব্যক্তি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। (শেষ)