মালয়েশিয়া যেতে কর্মীরা যাতে চক্রের মধ্যে না পড়েন, সতর্ক আছি: প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এজেন্সির চক্র (সিন্ডিকেট) ঠেকাতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে সব এজেন্সিকে সুযোগ দিতেও সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মালয়েশিয়াকে তো জোর করা যাবে না।
আজ বুধবার এই মন্ত্রণালয়ের এক বছরের কার্যক্রম নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল এ কথাগুলো বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, কর্মী পাঠাতে গত সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে গেছে। চুক্তিতেই বলা আছে, এজেন্সি বাছাই করবে মালয়েশিয়া। এখন জোর করে তো চুক্তি বদলানো যাবে না।
মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ চক্রের মূল হোতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার নাগরিক আমিন নূরের তৎপরতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, তিনি মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কাজ করেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার কোনো বিষয় নেই। আলোচনা হচ্ছে সরাসরি মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে। দেশটিতে যেতে কোনোরকম সিন্ডিকেট বা দুর্নীতি চক্রের মধ্যে কর্মীরা যেন না পড়েন, সে বিষয়ে সতর্ক আছে সরকার।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, শুরু থেকেই সব বৈঠকে মালয়েশিয়াকে বলা হয়েছে, অন্য দেশের মতো সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সুযোগ দিতে হবে। নির্দিষ্ট এজেন্সিকে দিলে কর্মীরা প্রতারিত হন, অভিবাসন খরচ বেড়ে যায়, অনেক রকমের দুর্নীতি হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সরকারের এক বছরের কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এতে বলা হয়, অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা কমে আসায় দক্ষ কর্মী পাঠানোয় সরকার নজর দিয়েছে। ইউরোপ-জাপানে দক্ষ কর্মী পাঠানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইউরোপের একাধিক দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। জাপানের সঙ্গে একাধিক চুক্তি হয়েছে। কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আরও চুক্তির আলোচনা চলছে। আগামী ৫ বছরে জাপানে ৫ লাখের বেশি কর্মী পাঠাতে জাপান সেল গঠন করা হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে অভিবাসনবিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত বছর শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার কারণে যেতে না পারা ৮ হাজার কর্মী পাঠাতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নামমাত্র খরচে তাদের দেশটিতে পাঠানোর কার্যক্রম নিয়েছে বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া প্রবাসীদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা ১৮৮ জন কর্মীর প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে ৯৪ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া কাউন্সেলিং ও আর্থিক প্রণোদনা হিসেবে প্রত্যেককে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা আবার বিদেশে যেতে চান, তাঁদের ব্রুনেই পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পুনর্বাসনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসন সম্প্রসারণ করতে প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের সঙ্গে আগামী সেপ্টেম্বরে একটি চুক্তি করার কথা রয়েছে। সৌদিপ্রবাসীদের সমস্যার সমাধানে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রথমবারের মতো মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা চালু হয়েছে। সৌদি আরব, জর্ডান ও ওমানে অনিয়মিত নারী শ্রমিকদের নিয়মিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জর্ডানে নারী কর্মী ও ওমানে লক্ষাধিক অবৈধ কর্মীকে বৈধ করার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘প্রবাসী লাউঞ্জ ও ওয়েটিং লাউঞ্জ’ স্থাপন করা হয়েছে। এতে ৩০ শতাংশ ছাড়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেসরকারি অ্যাপ ‘আমি প্রবাসী’ বন্ধ করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য একটি সমন্বিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের নিজস্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শতভাগ অনলাইনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কর্তৃক সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে বিদেশগামী কর্মীরা স্বল্প সময়ে এবং কম খরচে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশ যাচ্ছেন।