রাস্তা করেন, এক বর্ষায় টেকে না: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট ভবনফাইল ছবি

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘রাস্তা করেন, এক বর্ষায় টেকে না।’ এক শুনানিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ কথা বলেন।

যশোরে পাঁচটি নদীর ওপর আটটি সেতু নির্মাণে অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুসারে যথাযথ উল্লম্ব-অনুভূমিক জায়গা না রাখার বিষয়ে এক রিটের ধারাবাহিকতায় করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৮ মে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী বা তাঁর প্রতিনিধি এবং যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে ১১ জুন আদালতে হাজির হতে বলা হয়।

গতকাল প্রধান প্রকৌশলীর প্রতিনিধি হিসেবে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পল্লী উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা ইউনিট) মো. কামরুল আহসান ও যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দীন আদালতে হাজির হন। তাঁদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম জহুরুল ইসলাম। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম শামসুল হক ও সাইফুল ইসলাম।

শুনানিতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পল্লী উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা ইউনিট) মো. কামরুল আহসানের উদ্দেশে আদালত বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি নদীতে সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে উল্লম্ব-অনুভূমিক জায়গার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার কথা। আপনারা তা নেননি, সেতুগুলো তৈরি করছেন। এতে নৌপরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের বড় একটি পরিবহন খাত ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএর কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার কথা। এটা না নিয়ে কেন করলেন? এতে কি আইনের ব্যত্যয় ঘটছে না?

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কামরুল আহসান বলেন, ২০১০ ও ২০১৮ সালের বিধিমালা অনুসারে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সব সময় অনুমতি নেওয়া হচ্ছে। সেতুগুলো ওই বিধিমালার আওতায় পড়ে না বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন আইনজীবী এস এম জহুরুল ইসলাম।

একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘মানসম্মত উচ্চতা রাখলেই হয়, সেতু করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। নৌপথগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন কেন? অপরিকল্পিতভাবে কাজ করবেন? উল্লম্ব-অনুভূমিক যে জায়গা রাখার কথা রাখেননি। আইন মানলেন না কেন? আপনারা অনুমতি নেননি।’

আদালত বলেন, ‘এলজিইডি বড় প্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাট করেন, এক বর্ষায় টেকে না। অথচ কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। ২০ টন গাড়ি চলে, সেখানে ৫ টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন রাস্তা বানাচ্ছেন। ওই রাস্তা টিকবে কী করে? এই যে টাকাটা যাচ্ছে, পুরাটাই অপচয়।’

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কামরুল আহসান বলেন, অননুমোদিত ২০-৩০ টনের গাড়ি যায়, যা দেখার দায়িত্বে অন্য কর্তৃপক্ষ রয়েছে। আদালত বলেন, ‘কে কী করল তা নয়, আপনি আপনার কাজটা ঠিকমতো করছেন কি না, তা দেখবেন।’ আদালত বলেন, ‘উচ্চতা বাড়িয়ে দিয়ে কাজটা (সেতুগুলো নির্মাণ) করেন।’

নৌপথ ঠিক রাখতে হবে

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সব কাজ বর্তমানে বন্ধ আছে। আদালত বলেন, আদেশের পর বন্ধ আছে। উল্লম্ব যতটুকু যৌক্তিক হওয়া দরকার, তা রাখেন। নৌপথ ঠিক রাখতে হবে। যেভাবে ঠিক করার করেন, যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। উল্লম্ব-অনুভূমিক জায়গা রেখে যাতে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হয়।

অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘ভবিষ্যতে সারা দেশে ব্রিজের ক্ষেত্রে আইনে যা আছে, তা মেনে করবেন। নৌপথগুলো রক্ষা করেন, এর দায়িত্ব আপনাদের। ইঞ্জিনিয়াররা দেশ গড়ার কারিগর-এটা মনে রাখবেন।’

আদালত বলেন, ঠিক করতে কত দিন সময় লাগবে? তখন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএর কাছে সেতুগুলো পরিদর্শনের জন্য এবং ছাড়পত্রের অনুমতির আবেদন করা হয়েছে। মতামত পেলে ভালো হয়। তখন আদালত বলেন, উল্লম্ব-অনুভূমিক জায়গা রাখতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ কী করবে, সে জন্য বসে থাকবেন? আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন।’

এরপর আদালত যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফ উদ্দীনের বক্তব্য শোনেন। একপর্যায়ে তাঁর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘নোটিশ পাওয়ার পর যথাযথভাবে না করে দ্রুত কাজ (সেতু নির্মাণ) শেষ করার চেষ্টা করেছেন। কাজটি ঠিক করেননি।’

আদালত বলেন, ‘ছয় মাস সময় দেওয়া হচ্ছে, এর মধ্যে অগ্রগতি জানাবেন। ছয় মাসের মধ্যে যথাযথভাবে না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। ছয় মাস পর পরবর্তী আদেশের জন্য আসবে।’