রাখী দাশ পুরকায়স্থ স্মারকগ্রন্থ ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’-এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

সমাজের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষের স্মৃতিকথা শুধু ব্যক্তিগত তথ্য নয় বরং সময়কে ধরে রাখে। সেই সময়কে জানা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্য দিয়ে স্মৃতিরক্ষা হয় কর্মময় মানুষটিরও।

রাখী দাশ পুরকায়স্থ স্মারকগ্রন্থ ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’–এর প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে এসব কথা। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।  

প্রধান অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কথায় উঠে আসে, প্রাণপূর্ণ রাখী দাশের স্মৃতি। তিনি বলেন, মৃতরা কখনো মৃত নয়, যতক্ষণ আমরা ভুলে না যাই। ভালোবাসার চেয়ে বড় বিনিয়োগ আর কিছু নেই পৃথিবীতে। আত্মস্বার্থ যেন দেশের প্রতি ভালোবাসার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হয়, সে শিক্ষাটি রাখী দাশ নিজের জীবনে প্রমাণ করে গেছেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে রাখী দাশের ছোট বোন বহ্নি দাশ পুরকায়স্থ বলেন, বাংলাদেশের সব মুক্তি আন্দোলনে খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁকে। কিন্তু ব্যক্তি রাখী দাশ কেমন ছিলেন, সেই প্রতিরূপ ধরে রাখতেই এই গ্রন্থ।

৯৫টি স্মৃতিকথার সংকলন নিয়ে তৈরি বইটির ওপর আলোচনা করেন কবি ও সাংবাদিক সাজ্জাদ শরিফ। তাঁর  বক্তব্যে উঠে আসে, রাখী দাশের সহযাত্রী ও স্বামী পঙ্কজ ভট্টাচার্যের স্মৃতিকথা লেখার প্রসঙ্গটি। পঙ্কজ ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘তাঁর চিতাভস্ম ব্রহ্মপুত্রে ছড়িয়ে দেওয়ার সময় মনে হয়েছে, এই স্রোত বেয়ে পলি হয়ে বাংলাদেশের জল ও মাটিতে মিশে থাকবে রাখী দাশ পুরকায়স্থ।’ এই কথার সূত্র টেনে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, মানুষ যা যা থেকে আহরণ করে, যাতে নিজেকে বিনিয়োগ করে, সেখান থেকে উঠে আসে তাঁর পরিচয়। রাখী দাশ তেমনই মানুষ, যাঁর মতো কিছু মানুষ থাকলে বাংলাদেশ বদলে যেতে পারত।

কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, অনেকে কর্মী থেকে নেতা হন; কিন্তু রাখী দাশ নেতা থেকে কর্মী হয়েছেন। এটাই বোধ হয় তাঁর জীবনের বড় অর্জন।

সোহরাব হাসানের বক্তব্যে উঠে আসে প্রতিকূল সময়েও রাখী দাশের শামসুন্নাহার হলের ভিপি নির্বাচিত হওয়াসহ তাঁর কর্মময় জীবনের নানা পর্বের ইতিহাস। মানুষ কেমন করে নিজেকে ছড়িয়ে দিতে পারে, সেই প্রমাণ এই বই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রাখী দাশের জীবন আন্দোলন ও সংগ্রাম সবকিছু নিয়ে কর্মমুখর থাকার কথা বলেন নারী সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু। কত রকম জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন রাখী দাশ সে প্রমাণ এই বইতে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার যেটুকু অবদান, তা ইতিহাসের গুরুত্বের জন্যই লিখে রাখা প্রয়োজন।

রাজনীতিবিদ ও অধিকার কর্মী, সাংবাদিক সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মহিলা পরিষদ, বন্ধু–স্বজন–সহকর্মী এবং পরিবার নামে পাঁচটি পর্বে লেখা সংকলন নিয়ে প্রকাশিত বইটি সম্পর্কে আলোচনা করেন সাহিত্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী ও গবেষক মফিদুল হক। তিনি বলেন, মানুষের মৃত্যু হলেও সে মানব থেকে যায়। দীর্ঘদিনের পথ চলার স্মৃতি অনেকের। সেসব স্মৃতি থেকে নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে স্মারকগ্রন্থে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। তিনি বলেন, রাখী দাশ নারী অধিকারের ধারণা মানবাধিকারের বিশ্বাস থেকে করেছিলেন। তাই একে সামাজিক আন্দোলনে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের যে সময়, তা শুধু আমাদের জন্য স্বর্ণালি সময় ছিল তা নয়। সেটা বাঙালির বিকাশের সময়ও। সেসব সময়ের কথা লেখা আছে এ বইয়ে। রাখী দাশ যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই স্বাক্ষর রেখেছেন, দ্যুতি ছড়িয়েছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বই প্রকাশ করা হয়েছে।

সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুর রাহমানের ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’ কবিতা পড়ে শোনান আবৃত্তি শিল্পী লায়লা আফরোজ। রাখী দাশের কাছ থেকে প্রেরণা পাওয়ার কথা বলেন মনিরা ত্রিপুরা।