সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দের ব্যানারে ‘মতবিনিময় সভা’ করেন আইনজীবীদের একাংশ
ছবি: প্রথম আলো

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যবৃন্দের ব্যানারে আজ বুধবার ‘মতবিনিময় সভা’ করেছেন আইনজীবীদের একাংশ। সভায় অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করে, সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সমিতির ইতিহাসে ১৫ ও ১৬ মার্চকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ১৫ ও ১৬ মার্চ কালো দিবস হিসেবে পালিত হবে।

সমিতির দক্ষিণ হলে ‘সমিতির বর্তমান সংকট এবং উত্তরণ নিয়ে সমিতির সাবেক নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ এবং সদস্যবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুইটা পর্যন্ত মতবিনিময় সভা চলে। সমিতির সাবেক সম্পাদক আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শাহ আহমেদ বাদল।  

আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদল বলেন, ১৫ ও ১৬ মার্চ পুলিশ দিয়ে প্রহসনের নির্বাচন করার যে চেষ্টা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে ১৫ ও ১৬ মার্চ কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আগামী ১ এপ্রিলের আগেই সমিতির সংবিধান অনুযায়ী তলবি সাধারণ সভা আহ্বান করে ১৪ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করা; তিন মাসের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং রাজনৈতিক দলের প্যানেল বন্ধ করে সমিতির সদস্যদের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব সভা গ্রহণ করেছে।

সমিতির চলমান ব্যাংক হিসাব আপাতত স্থগিত করার জন্য সাবেক নেতাদের স্বাক্ষরে সোনালী ব্যাংকসহ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়ার জন্য সভা প্রস্তাব করেছে বলে উল্লেখ করেন শাহ আহমেদ বাদল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘১৫ ও ১৬ মার্চ যেহেতু ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে, ভোট ডাকাতি হয়েছে—এই সুপ্রিম কোর্ট সমিতির ইতিহাসে ওই দুই দিনকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষণা করছি। কালো দিবস হিসেবে ১৫ ও ১৬ মার্চ পালিত হবে।’ এই প্রস্তাবগুলো তুলে ধরার এক পর্যায়ে উপস্থিত কয়েকজন আইনজীবীকে দাঁড়িয়ে সমর্থন দিতে দেখা যায়।

এসসিবিএ সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুবের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, সাবেক সহসভাপতি এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক ও গোলাম রহমান ভূঁইয়া, সাবেক সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মো. রুহুল কুদ্দুস, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার ও মো. শফিউদ্দিন ভুইয়া ও সদস্য মির্জা আল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি প্যানেল থেকে সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন মতবিনিময় সভায় বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আমাদের জীবিকা দেয়, মর্যাদা দেয়।…নির্বাচনের নামে সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদা হানি হয়েছে, কলঙ্কের ছাপ লেপন করে দিয়েছে।…সুপ্রিম কোর্ট আমাদের সেকেন্ড হোম, এই হোমে আমি নিরাপদ নই।’

সমিতির সাবেক সহসভাপতি এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, ‘৪০ বছরের পেশায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা দেখিনি, এবার দেখছি। রাষ্ট্রীয় জীবনে দেখছি, চর দখল হয়ে যায়, মানুষের ঘরবাড়ি দখল হয়ে যায়, ভোটাধিকার হরণ হয়ে যায়। সংবিধানকে কলুষিত করা হয়।…আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। যাদের খুঁটির জোরে তারা এই কাজগুলো করছে, তাদের খুঁটি উপড়ে ফেলতে হবে, নইলে আমাদের মুক্তি নেই। জাতীয়ভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই, এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই।’

বিএনপি প্যানেল থেকে সম্পাদক পদপ্রার্থী আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস সভায় কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন যেহেতু অনুষ্ঠিত হয়নি এবং কমিটির মেয়াদ ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত, তাই অবিলম্বে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করে সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে অবিলম্বে নির্বাচন দিতে হবে। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক দাবিদার যাঁরা থাকেন, তাঁরা বিভিন্ন সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাঁদের নানাভাবে অ্যাড্রেস করা হয়। যেহেতু বৈধ কোনো কমিটি ১ এপ্রিলের পরে থাকবে না, সুতরাং প্রধান বিচারপতি, সব বিচারপতি, সরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করতে হবে, যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন, তাহলে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বা আহ্বায়ককে অ্যাড্রেস করে শুধু চিঠিপত্র দিতে হবে।

শুরুতে গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এটি আমাদের সমিতি। আমরা নির্ধারণ করব কে সভাপতি ও কে সম্পাদক হবেন? আমাদের ভোট পুলিশে দেবে—এটি কল্পনাও করা যায় না। আপনারা বিশিষ্ট ব্যক্তি, তারপরও আপনাদের ভোটগুলো চুরি হয়ে গেল। এর সমাধানের জন্য ডাকা হচ্ছে, সংবিধান সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে আজকে একত্র হয়েছি। সাধারণ সদস্যদের ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।’ যে কমিটি হয়েছে, তা অবৈধ দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটি আমরা মানি না। অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না।’

একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করতে হবে উল্লেখ করে সভাপতির বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সম্পাদককে চিঠি দেওয়া হচ্ছে সাধারণ সভা আহ্বান করার জন্য। সাত দিনের মধ্যে যদি উনি না ডাকেন, তাহলে আমরাই সভা ডাকব।’