বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ রাখতে আপিলে উদ্যোগী হলে প্রশাসনকে সহায়তা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম উচ্চ আদালতে স্থগিত হওয়ার পর ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিপরীতে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হলে এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি।

আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলেছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মনজুর মোরশেদ। সভাপতি মিজানুর রহমান বর্তমানে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) পদেও দায়িত্ব পালন করছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ এক বিবৃতিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতি বলেছে, গত ২৮ মার্চ ২০২৪ থেকে উদ্ভূত ঘটনায় (রাতদুপুরে একটি ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের বুয়েট ক্যাম্পাসে অনাহূত আগমন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ দাবি, সংশ্লিষ্ট কিছু বুয়েট ছাত্রের বহিষ্কার দাবি, উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ না করা, টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন, ১ এপ্রিল মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক বুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধে জারিকৃত আদেশ স্থগিতকরণ, শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলন ও একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা) উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বুয়েট শিক্ষক সমিতি তাদের বিবৃতিতে কিছু পর্যবেক্ষণ যোগ করেছে। এগুলো হলো: প্রথমত, বুয়েট ক্যাম্পাসসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেজিস্ট্রারের। সবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানানো যাচ্ছে। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের পাঠানো ই–মেইল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানায় সমিতি।

দ্বিতীয়ত, সাংগঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দেওয়া জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করার যে রায় ১ এপ্রিল হাইকোর্ট দিয়েছেন, তার বিপরীতে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হবে এবং এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

তৃতীয়ত, ২০১৯-পরবর্তী বছরগুলোয় বুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম অবাধে চলেছে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় ছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ রাখা, বিদ্যাচর্চা অক্ষুণ্ণ রাখা সবার দায়িত্ব। শিক্ষক সমিতি এমন পরিবেশই প্রত্যাশা করে। এমতাবস্থায় বর্তমান অচলাবস্থা নিরসন ও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালুর দাবি জানাচ্ছে শিক্ষক সমিতি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও নিষ্কলুষ ক্যাম্পাস আমাদের সবার কাম্য। সব অংশীজনের সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে অচিরেই সে অবস্থা ফিরে আসবে বলে শিক্ষক সমিতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।’

২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২৭ মার্চ মধ্যরাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ডিএসডব্লিউর পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।

আন্দোলনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। এর ফলে এই ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।

এদিকে ৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, দুই দিনব্যাপী জনমত নিরীক্ষণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করেন। ৫ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।