বিরোধ নিষ্পত্তিতে গ্রাম আদালতের আইনগত ভিত্তি রয়েছে। গ্রামীণ জনপদে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে গ্রাম আদালত সেবা দিতে পারেন। মামলাভেদে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। গ্রাম আদালতে স্বল্প সময়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়। খরচ কম বা নেই বললেই চলে। অথচ অনেকেই সেবাটি সম্পর্কে জানেন না। এ জন্য প্রচার–প্রচারণার পাশাপাশি সচেতনতা দরকার। সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
ল রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আজ বুধবার বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ–৩য় পর্যায় প্রকল্প, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় বক্তারা হলেন, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে তৃণমূল স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। ছোট ছোট সমস্যা সমাধানে গ্রাম আদালত বিরোধ নিষ্পত্তির একটা ব্যবস্থা। ১৯৭৬ সাল থেকে আইনের মাধ্যমে গ্রাম আদালত প্রচলিত। ২০০৬ সালে আইন সংশোধন এবং ২০১৬ সালে বিধিমালা প্রণয়নের পর গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সারা দেশের ৬১টি জেলার ৪ হাজার ৪৫৩টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম চলমান আছে।
বক্তারা বলেন, আবেদনকারী ও প্রতিবাদী পক্ষ থেকে দুজন করে চারজন এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ মোট পাঁচজন নিয়ে গ্রাম আদালত প্যানেল গঠিত হয়। নারীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় হলে গ্রাম আদালত গঠনের ক্ষেত্রে নারী সদস্য মনোনয়ন বাধ্যতামূলক। গ্রাম আদালতে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় প্রকার বিরোধের নিষ্পত্তি হতে পারে। নিজের কথা নিজে বলা যায়, আইনজীবী লাগে না।
বক্তারা আরও বলেন, গ্রাম আদালতে দেওয়ানি মামলার জন্য ফি ২০ টাকা আর ফৌজদারি মামলার জন্য ফি ১০ টাকা। এখতিয়ারভুক্ত ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে অনধিক তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারেন গ্রাম আদালত।
মতবিনিময় সভায় বলা হয়, গ্রাম আদালত আইনের তফসিলভুক্ত অপরাধ নিয়ে থানায় কিংবা আদালতে মামলা হলেও কোর্ট (জেলা আদালত) থেকে মামলাগুলো গ্রাম আদালতে পাঠানো হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি মামলা কোর্ট (জেলা আদালত) থেকে ইউনিয়ন পরিষদে পাঠানো হয়েছে। কোর্ট থেকে পাঠানো মামলার ক্ষেত্রে কোনো ফি লাগে না।
সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ–৩য় পর্যায় প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক সুরাইয়া আখতার জাহান উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এই প্রকল্পের সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্তী। গ্রাম আদালত আইনের বিস্তারিত দিকগুলো সভায় তুলে ধরেন ইউএনডিপির লিগ্যাল এক্সপার্ট মশিউর রহমান চৌধুরী।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহফুজা আক্তার, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব খোন্দকার মো. নাজমুল হুদা শামিম এবং ল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি হাসান জাবেদ। ইউএনডিপির জেন্ডার অ্যানালিস্ট শামীমা আক্তার শাম্মীর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় ইউএনডিপির সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট তানভীর মাহমুদ সমাপনী বক্তব্য দেন।