সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানার জামিন বহাল
সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিন বহাল রয়েছে। জামিনের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষের করা আবেদন নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ রোববার এ আদেশ দেন।
এর আগে এ মামলায় ২ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে সুলতানা পারভীন জামিনের আবেদন করেন। বিচারক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে ৪ সেপ্টেম্বর আবেদন করেন সুলতানা পারভীন। এ আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে তাঁকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তী জামিন দেন। ওই মামলায় আবেদনকারীকে (সুলতানা পারভীন) কেন নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলটি (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে বাদীপক্ষ (সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম)। আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের আজকের কার্যকালিকায় ১০৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে বাদীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। জামিন আবেদনকারীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস এবং আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন ও মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ শুনানিতে ছিলেন।
হাইকোর্টের জামিনাদেশের পর সুলতানা পারভীন ১১ সেপ্টেম্বর কারামুক্তি পেয়েছেন বলে জানান তাঁর অন্যতম আইনজীবী মো. ফয়জুল্লাহ ফয়েজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেম্বার আদালত বাদীপক্ষের করা আবেদনটি নিষ্পত্তি করে আদেশ দিয়েছেন। সুলতানা পারভীন নারী ও সার্ভিসে (সরকারি চাকরিতে) আছেন এবং মামলার ধার্যতারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি বিচারিক আদালতে হাজির হন। এসব বিষয় শুনানিতে তুলে ধরা হয়। শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত সুলতানা পারভীনকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রেখেছেন। একই সঙ্গে তাঁর জামিন প্রশ্নে রুল যত দ্রুত সম্ভব হাইকোর্টে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। সুলতানা পারভীন জামিনের অপব্যবহার করলে হাইকোর্ট রুল শুনানির সময় তা বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন চেম্বার আদালত।’
২০২০ সালের ১৩ মার্চ রাতে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসায় অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ ও বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে তাঁকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে নির্যাতন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার হুমকি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।
পরে আরিফুলের বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও ১৫০ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাৎক্ষণিক এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসক ছাড়াও তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ওই ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে প্রশাসন। পরে আরিফুল ইসলামকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিক আরিফুল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। পাঁচ বছর ধরে মামলাটি চলছে।