চালু হচ্ছে ভারত থেকে ডিজেল আনার পাইপলাইন

জ্বালানি তেল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৭৫ শতাংশই ডিজেল। এর সিংহভাগ আসে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে। কম খরচে ডিজেল আমদানির চেষ্টা করছে সরকার। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকেও আমদানি বাড়াতে চায় তারা। দেশটি থেকে সরাসরি ডিজেল আনতে তৈরি করা হয়েছে পাইপলাইন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই পাইপলাইন দিয়ে পরীক্ষামূলক সরবরাহ শুরু হবে।

বছরে বিপিসির পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ টন। এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল, যার ৮০ শতাংশই সরাসরি আমদানি করা হয়। বাকিটা স্থানীয় পরিশোধনাগার থেকে পাওয়া যায়।

বর্তমানে ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে নিয়মিত ডিজেল আনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ২০১৭ সাল থেকে ট্রেনের ওয়াগনে করে আসছে এ তেল। তবে বছরে এর পরিমাণ ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টনের বেশি নয়। এ রিফাইনারি থেকে তেল আনার পরিমাণ বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন।

বিপিসি সূত্র বলছে, ওয়াগনে করে ডিজেল আনতে গেলে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। এ ছাড়া অপচয়ের ঝুঁকি বাড়ে। পাইপলাইনে আনা হলে তা সাশ্রয়ী হবে। তবে প্রতি লিটারে ঠিক কতটা সাশ্রয় হবে, তা এখনই বলতে পারছে না প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

বছরে ১০ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ করা যাবে এ পাইপলাইন দিয়ে। প্রাথমিকভাবে বছরে দুই থেকে তিন লাখ টন ডিজেল আনার পরিকল্পনা করছে বিপিসি। এরপর খরচ ও চাহিদা বুঝে সরবরাহ বাড়ানো হবে। চুক্তি অনুসারে সরবরাহ শুরুর পর ১৫ বছর পর্যন্ত এ পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে ডিজেল নেবে বিপিসি।

আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই মৈত্রী পাইপলাইন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজেল সরবরাহ শুরু হবে। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ১৮ মার্চ এটি উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবিএম আজাদ, বিপিসির চেয়ারম্যান

২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাইপলাইনের কাজ উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ১৮ মার্চ দুই প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ পাইপলাইন উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

২০২০ সালের মার্চে এই পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়। তবে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কাজটির গতি কমে যায়। এতে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে আগামী জুন পর্যন্ত করা হয়।

ভারতের নুমালিগড় রিফাইনারি ও বিপিসির অধীনস্থ কোম্পানি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। পূর্ব ভারতের নুমালিগড় থেকে শিলিগুড়ি রেল টার্মিনাল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পাইপলাইন আছে আগে থেকেই। শিলিগুড়ি টার্মিনাল থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে নতুন করে। এ প্রকল্পে ভারত সরকার ৩০৩ কোটি টাকা ও বিপিসি ২১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে কম দামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। তাই ভারত চাইলে তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশকে ডিজেল সরবরাহ করতে পারবে।

তবে প্রকল্পে এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। তেল সংরক্ষণের জন্য নতুন ডিপো এখনো তৈরি হয়নি। ২৯ হাজার টন তেল মজুত করার জন্য এই ডিপো তৈরি করা হচ্ছে। আপাতত পুরোনো ডিপোতে মজুত করা হবে। সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন তেল মজুত করা যাবে।

বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই মৈত্রী পাইপলাইন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ডিজেল সরবরাহ শুরু হবে। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ১৮ মার্চ এটি উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বছরে বিপিসির পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬০ লাখ টন। এর মধ্যে ৪৬ লাখ টন ডিজেল, যার ৮০ শতাংশই সরাসরি আমদানি করা হয়। বাকিটা স্থানীয় পরিশোধনাগার থেকে পাওয়া যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্ববাজারে ডিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকে। বাড়তি দামে জ্বালানি তেল কিনতে গিয়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রাহক পর্যায়ে রেকর্ড দাম বাড়িয়েও লোকসান কমাতে পারেনি বিপিসি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে কম খরচে জ্বালানি তেল, বিশেষ করে ডিজেল আমদানির জন্য বিকল্প উৎস খুঁজছে সরকার। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) থেকেও ডিজেল আমদানি নিয়ে আলোচনা চলছে। এ সংস্থাটিকে সরবরাহকারী হিসেবে বিপিসির তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এখনো সরবরাহ আদেশ চূড়ান্ত হয়নি।

তবে পাইপলাইন চালুর পর ভারত থেকে ডিজেল সরবরাহ বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে কম দামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। তাই ভারত চাইলে তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশকে ডিজেল সরবরাহ করতে পারবে। বিশ্ববাজারেও জ্বালানি তেলের দাম এখন কমতির দিকে।