ব্রতচারীচর্চা বিশ্বমানব হওয়ার প্রেরণা জোগায়

‘ব্রতচারী’ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ পরিবেশনা
ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

ব্রতচারীচর্চা সবাইকে ভালো মানুষ, শাশ্বত বাঙালি ও বিশ্বমানব হওয়ার প্রেরণা জোগায়, পথ দেখায়। জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য আর আনন্দ—এই পঞ্চব্রত নিয়েই ব্রতচারীদের কাজ। ব্রতচারীরা নৃত্য–গীতের চর্চা করার পাশাপাশি শ্রমসাধ্য কাজে যুক্ত হয়ে সমাজসেবায়ও নিয়োজিত হন। সংকুচিত সংস্কৃতিচর্চার এই সময়ে ব্রতচারীচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।

‘ব্রতচারী’ বাংলাদেশের দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। সম্মেলনে জানানো হয়, ব্রতচারী আন্দোলন হচ্ছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐক্যের ভেতর দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার চর্চা। ইতিমধ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রমে ব্রতচারী আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠক্রমে তা শেখানো হচ্ছে।

প্রায় ১০০ বছর আগে ব্রিটিশ যুগে বাঙালি আইসিএস কর্মকর্তা গুরুসদয় দত্ত ব্রতচারী আন্দোলন শুরু করেন, যিনি আবহমান সংস্কৃতি সমুন্নত রেখে শাশ্বত বাঙালি হয়ে বাঁচার উপায় শিখিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের সিলেটের বীরশ্রী গ্রামের সন্তান গুরুসদয় দত্তের চালু করা ব্রতচারী আন্দোলন নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও চর্চা আছে।

রাজধানীতে ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে গতকাল শনিবার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দিবাভাগে সাংগঠনিক পর্ব শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয় ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত প্রবর্তিত নৃত্য–গীত, ব্রতচারী আন্দোলন ও চর্চার ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যার এই অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানে ব্রতচারীর সভাপতি সন্‌জীদা খাতুনের একটি রেকর্ড করা ভিডিও দেখানো হয়। এতে তিনি বলেন, গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলন শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐক্যের ভেতর দিয়ে মানুষ হতে বলে। শাশ্বত বাঙালি হয়ে বাঁচার উপায় শিখিয়ে গেছেন তিনি। ব্রতচারীচর্চার মধ্য দিয়ে যেন দেশের মানুষ সুগঠিত, সংগঠিত ও বাঙালি হতে পারেন, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সনজীদা খাতুন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ব্রতচারীচর্চা এ দেশের নিজস্ব মাটি ও সংস্কৃতির অংশ। শুধু শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা নয়; প্রাত্যহিক জীবনেও এর চর্চা করা উচিত। নতুন শিক্ষাক্রমে ব্রতচারীচর্চা শেখানো শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ব্রতচারীচর্চা চালু হয়েছে। আগামী বছরগুলোয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অন্য ক্লাসগুলোয়ও এটি চালু করা হবে। এ ছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্রতচারীচর্চা শুরু করার ব্যাপারে তিনি ইচ্ছা পোষণ করেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্রতচারী কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চালু করা যায়নি। অনতিবিলম্বে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর পরামর্শে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।