বুয়েট খোলার দ্বিতীয় দিনে ১৩০৫ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বর্জন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের টানা ১৩ দিনের ছুটি শেষে  বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) গতকাল বুধবার থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই দুই দিন কোনো ক্লাস ছিল না, তবে পরীক্ষা ছিল। গতকাল প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন। আর আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছেন বুয়েটের নবীনতম ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা৷

ছুটির আগে শিক্ষার্থীরা বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন। যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী বাস-ট্রেনের টিকিটের সংকটের কারণে ফিরতে পারেননি। তাই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেননি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সকালে টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় বুয়েটের ২২ ব্যাচের ১ হাজার ৩০৫ জন শিক্ষার্থীর কেউই অংশ নেননি। এর আগে গত ৩০ মার্চ বুয়েটে নিজেদের শিক্ষাজীবনের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন এই শিক্ষার্থীরা। গতকাল ২১ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় মাত্র ৮ জন অংশ নেন। অনুপস্থিত ছিলেন ১ হাজার ২৭১ জন শিক্ষার্থী।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামনের সারিতে থাকা একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। রাজনীতিমুক্ত সুন্দর বুয়েট ক্যাম্পাসের প্রশ্নে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা যে ঐক্যবদ্ধ, স্বতঃস্ফূর্তভাবে পরীক্ষা বর্জনের ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।

গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রবেশ করেন। একে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ’ ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। ৪ এপ্রিল থেকে বুয়েটে ছুটি শুরু হয়। আন্দোলনের সমর্থনে ওই সময় বুয়েটের ১৮, ২০ ও ২২ ব্যাচের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন।

১ এপ্রিল উচ্চ আদালতের এক রায়ের পর বুয়েটে আবার ছাত্ররাজনীতি চালু হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আদালতের ওই রায়ের বিপরীতে আপিল করার বিষয়টিতে প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হলে এ ক্ষেত্রে তাঁরা সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলে ৮ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। ৫ এপ্রিল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুয়েটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট অ্যালামনাই বলেছে, বুয়েট বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে, যদি এখানে একটি রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ বজায় থাকে।

বুয়েটে ছুটি শেষে গতকাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। ক্যাম্পাস খোলার আগে গত পরশু বুয়েটের ডিএসডব্লিউ মো. মিজানুর রহমানকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই পদে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরকৌশলের অধ্যাপক মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিককে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে খোলার প্রথম দিনে ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেন। যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার ফিরতি টিকিটের সংকটের কারণে অনেকে এখনো আসতে পারেননি। সে জন্য এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেননি।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামনের সারির একজনের ভাষ্য, তাঁরা আপিলের জন্য অপেক্ষা করছেন।

এদিকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আদালত থেকে আদেশের কপি এখনো আসেনি বলে আজ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন বুয়েট প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের একজন ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমরা জেনেছি, ২২ এপ্রিল পর্যন্ত আদালত বন্ধ রয়েছে। এরপর হয়তো আদেশের কপিটি আসবে। আইনি প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক গতিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই রেসপন্স করবে। আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ পথটাই আমরা ব্যবহার করব। এ ক্ষেত্রে আমরা একা নই৷ আমাদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থী এবং অ্যালামনাইরাও থাকবেন।’