বিচার বিলম্বিত ও ব্যয়বহুল হলে আইনও অসম্মানিত হয়: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিলম্বিত ও ব্যয়বহুল হলে আইনও অসম্মানিত হয়। এতে ব্যবস্থাটি অসম্মানিত হয়। সে জন্য বিচারপ্রার্থীদের জন্য আইনি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন এডিআর: রোল অব ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড কমিটিস ইন ইমপ্লিমেন্টিং নিউ লেজিসলেশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি।
আলোচনায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) উপকারিতা তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, এখানে দরিদ্র নারীরা তাঁদের ভরণপোষণ পাওয়ার জন্য লড়াই করেন, শ্রমিক তাঁর মজুরি পাওয়ার জন্য অথবা জমি থেকে বাস্তুচ্যুত কৃষক প্রথমেই আইনের মুখোমুখি হন। যদি সেই মুখোমুখি হওয়াটা মানবিক, দ্রুত ও সাশ্রয়ী হয়, তাহলে আইনের অর্থ আছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস বিচারব্যবস্থার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমার প্রশাসনে আসার এক বছর পর ন্যায়বিচার, বিচার প্রশাসন এবং বিচারিক সংস্কারের ধারণায় এক বিরাট পরিবর্তন এসেছে। বিচার বিভাগ বর্তমানে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
এ সময় লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে সেবাপ্রার্থীদের আইনি সহায়তা দিতে তাঁর দপ্তর থেকে পাঠানো গত বছরের বিজ্ঞপ্তির কথা মনে করিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ বিচার করতে যে সময় লাগে, লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে তার ১ শতাংশ খরচ নিয়ে, দশ ভাগের এক ভাগ সময় নিয়ে মানুষকে সন্তুষ্ট করা যায়। বর্তমানে লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলা না করেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মামলার দীর্ঘসূত্রতা মানে হচ্ছে একটা মানুষের সর্বনাশ হয়ে যাওয়া বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, কয়েক লক্ষ কোটি টাকা লাগবে আমাদের পুরো জুডিশিয়ারিকে ফিক্স করতে। লক্ষ কোটি টাকা রাগ করে বললাম, কয়েক হাজার কোটি টাকা লাগবে। অথচ আমি যখন চিন্তা করলাম যে আমরা যদি লিগ্যাল সিস্টেমটাকে ইফেক্টিভ করতে পারি কত অল্প খরচে, কত অল্প কষ্টে, আমরা কত মানুষকে রিলিফ (স্বস্তি) দিতে পারি।’
আদালতে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপনের জন্য জায়গা নেই বলে হতাশা প্রকাশ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘দুঃখ করে বলি, অনেকগুলো বড় বড় জেলাতে আমরা চিন্তা করেছিলাম, যেখানে লিগ্যাল এইড অফিস দেব, কিন্তু অফিসটা এত ছোট, ওখানে লিগ্যাল এইড দেওয়ার কোনো স্কোপ (সুযোগ) নাই।’ তবে সারা দেশের আদালতগুলোতে লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপনের জন্য প্রয়োজনে আদালতের ন্যায়কুঞ্জ ব্যবহার করা হবে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে আইনি সহায়তা কার্যক্রমের ওপর তথ্যচিত্র তুলে ধরে বক্তব্য দেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আজাদ সুবহানী। তিনি বলেন, মামলা হওয়ার আগে ৮৯ শতাংশ এবং পরবর্তী সময়ে ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ মামলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোর মাধ্যমে সফলভাবে মধ্যস্থতা করা হয়েছে। আগামী দিনে এটি সবার জন্য আরও বাড়ানো হবে, যাতে যে কেউ এ সেবা নিতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ আবু তাহের প্রমুখ।