চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নেতা হতে চান ১ হাজার ৪০০ জন

বাংলাদেশ ছাত্রলীগছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শ ও মতামত নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে। এরমধ্যে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের ১ হাজার ৪০০ নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে নগরের কলেজগুলোর পাশাপাশি থানা কমিটির নেতারাও আছেন। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের জন্যও প্রায় ছয় শ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কেন্দ্র থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছিল। এরপর চলে যাচাই-বাছাই।

দরীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটির জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দের সাত নেতার নামও গেছে কেন্দ্রে। নগর ছাত্রলীগের বিষয়েও চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির দুটি ধারার নেতাদের সঙ্গে এক দফা আলাপ–আলোচনা হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের।

চট্টগ্রাম নগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সাবেক দুই মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নগর কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের দুটি বলয় রয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে ধরে পক্ষটি পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সবখানে এই দুই ধারা চলে আসছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া নগর কমিটির বিষয়েও পৃথক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য চট্টগ্রামও ঘুরে যান গত মাসে।

এখন কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম নগর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নেতারা। জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার পর থেকেই পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছেও তদবির করছেন পদপ্রত্যাশীরা। দ্রুততর সময়ে কমিটি দেওয়া হবে বলে শুরু থেকে হাঁকডাক থাকলেও সে সময় আর আসে না।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিগগির দুটি কমিটি ঘোষণা করা হবে। যাচাই–বাছাই চলছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে কমিটি দেওয়া হবে।

নগর আওয়ামী লীগের দ্বারস্থ

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হোসাইন আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত মাসে চট্টগ্রামে আসে। তারা ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্বের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করে। মূলত মহিউদ্দিনপন্থী ও নাছিরপন্থীদের সঙ্গে সম্ভাব্য ছাত্রলীগ কমিটির বিষয়ে কথা বলে তারা।

জানতে চাইলে মো. হোসাইন আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও আমাদের কথা হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে নাকি কর্মিসভা করে নগর কমিটি গঠন করা হবে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। হয়তো কোরবানি ঈদের পর আরেক দফা কথা হবে তাঁদের সঙ্গে। এরপর দ্রুততর সময়ে কমিটি ঘোষণা হবে।’

জানা গেছে, দুই বলয়ের নেতাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শক্রমে দেড় হাজার সদস্য থেকে একটা সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে।

জানতে চাইলে নগর আওয়ামী সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ আমাদের সঙ্গে কথা বলে গেছে। কমিটি দেবেন তাঁরা। তবে আমার মনে হয় না খুব সহসা এটা হবে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো শাখা কমিটি এখনো হয়নি। তারপরও সবকিছু যাচাই-বাছাই করে তারা কমিটি ঘোষণা করুক।’

এক প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কোনো পক্ষ-বিপক্ষ বুঝি না। অছাত্র, বিবাহিত, সন্ত্রাসী, মাদকাসক্তদের বাদ দিয়ে প্রকৃত দল ও আদর্শের প্রতি আনুগত্যশীলদের দিয়ে কমিটি হোক।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে গঠিত চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের ১ বছরের কমিটি ১০ বছর পার করেছে। ওই কমিটির ২৯১ জনের অধিকাংশ নেতা এখন বিবাহিত। ছাত্রত্ব নেই বেশির ভাগের।

দক্ষিণের সাতজনের নাম প্রস্তাব

দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটির জন্য প্রায় ছয় শত জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের। এ ছাড়া পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সমন্বয় সভাও অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়।

সবশেষে কমিটির জন্য সাতজনের নাম প্রস্তাব করে দক্ষিণের আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি এই নামগুলো প্রস্তাব করে। এই সাতজনের মধ্য থেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বেছে নেওয়ার তাগিদ দেন তাঁরা।

এর মধ্যে সাতকানিয়া উপজেলার তিনজন, বাঁশখালী উপজেলার একজন, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দুজন রয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি দক্ষিণের কমিটি অনেকটা গুছিয়ে এনেছেন বলে জানা গেছে। নগরের আগেই এই কমিটি ঘোষণা হতে পারে।

জানতে চাইলে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের চাওয়া অনুযায়ী আমরা সাতজনের নাম পাঠিয়েছি। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে শীর্ষ দুজনকে দায়িত্ব দিতে বলেছি। এখন প্রস্তাব অনুযায়ী তারা যাচাই-বাছাই করে দেখুক। এটা সম্পূর্ণ ছাত্রলীগের এখতিয়ার।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৪ অক্টোবর এস এম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এরপর ২০২০ সালের ৪ মার্চ পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। নানা অভিযোগের কারণে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।