আবার নির্বাচনের মাঠে চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর

মোহাম্মদ মনজুর আলম

রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন নীরব থাকলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় এই ঘোষণা দেন তিনি। গত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও এবার দলীয় ফরম সংগ্রহ করেননি।

সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। কোনো দলের ব্যানারে নির্বাচন না করলেও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। আর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মঙ্গলবার বা বুধবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন বলে জানান।

মোহাম্মদ মনজুর আলম ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফছারুল আমীনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন তিনি। তবে ওই বছর আর নির্বাচন করেননি।

তৎকালীন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমীনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুর পর চলতি বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয় নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিনকে। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া মহিউদ্দিন আগামী নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেয়েছেন।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে চট্টগ্রামে আলোচিত হন মোহাম্মদ মনজুর আলম। ‘রাজনৈতিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। মেয়র হওয়ার পর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাও হয়েছিলেন।

২০১৫ সালের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের নির্বাচনেও বিএনপির সমর্থনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। একপর্যায়ে নির্বাচনের দিন সকালে কারচুপির অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করে রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মনজুর আলম। এরপর থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রমে দেখা যায়নি তাঁকে। বর্তমানে এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির কোনো দলে তাঁর কোনো পদ-পদবি নেই। পারিবারিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামাজিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি।

বিএনপির সমর্থনে জয়লাভ করার পর ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ মনজুর আলম। বিএনপিতে থাকার সময়েই তাঁর ভাতিজা দিদারুল আলমকে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৪ আসনে (সীতাকুণ্ড-নগরের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড) মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৮–তেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন দিদারুল আলম। তবে এবার তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মনজুর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। কিন্তু দলীয় সাড়া না পাওয়ায় মনোনয়ন চাইনি। তবে সাধারণ মানুষের সমর্থন আমার পক্ষে আছে। এলাকার মানুষ নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করেছেন। এ কারণে নির্বাচন করব।’

নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১০ উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বলে আক্ষেপ করে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, এই এলাকা অনেকটা পিছিয়ে আছে। অনেক এলাকায় ভালো মানের স্কুল-কলেজ নেই। জলাবদ্ধতায় মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। সড়কগুলোও বেহাল। ফলে জীবনের শেষ সময়ে এসে যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের কাছ থেকে কিছু আদায় করে আনতে পারেন, তাহলে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন। জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করবেন।