আসন-সংকটের সমাধান চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ, আশ্বাসে হলে ফিরলেন ছাত্রীরা

হল প্রশাসনের কাছ থেকে আবাসন-সংকটের বিষয়ে কোনো আশ্বাস বা সাড়া না পেয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেনছবি: প্রথম আলো

আবাসন-সংকটের কারণে এক কক্ষে ছয়জনের জায়গায় নতুন করে আরও একজন করে ছাত্রীকে আসন দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল প্রশাসন। এর প্রতিবাদে সংকটের সমাধান চেয়ে প্রচণ্ড শীতের রাতে প্রথমে হল প্রাঙ্গণ ও পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন একদল ছাত্রী। উপাচার্য বাসভবন থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক কথা বলে আশ্বস্ত করেন। পরে রাত দেড়টার দিকে হলে ফিরে যান ছাত্রীরা।

আবাসন-সংকটের সমাধান চেয়ে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে কুয়েত মৈত্রী হলের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রীরা। তাঁরা হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। হল প্রশাসনের কাছ থেকে দাবির বিষয়ে কোনো আশ্বাস বা সাড়া না পেয়ে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা হল থেকে বেরিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

কুয়েত মৈত্রী হলে আবাসনসংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে গত বছরের আগস্টেও ছাত্রীরা বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবারের ঘটনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় এক কক্ষে ৬ জনের পরিবর্তে ৭ জনের থাকার ব্যবস্থা নিয়ে।

হলটির প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, কুয়েত মৈত্রী হলের মূল ভবনে ৮৬টি কক্ষ আছে। এর মধ্যে ৫১টি কক্ষে ৭ জন করে ছাত্রী থাকে। বাকি ৩৫টি কক্ষে ৬ জন করে ছাত্রী থাকতেন। হলের পুরোনো সিকদার মনোয়ারা ভবনে ১৪০ জন ছাত্রী থাকতেন। সর্বশেষ ভূমিকম্পের পর প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেখানকার ৩ কক্ষে ৩২ জন ছাত্রীকে ফয়জুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রীনিবাসে পাঠানো হয়। ১০ জন ছাত্রীকে সুফিয়া কামাল হলে দেওয়া হয়। জ্যেষ্ঠ ছাত্রীদের ৩৮ জনকে মূল ভবনের ৩৮টি কক্ষে আসন দেওয়া হয়। এর ফলে সেখানে ৬ জনের জায়গায় ৭ জনের থাকার ব্যবস্থা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান প্রাধ্যক্ষ নাজমুন নাহার।

৬ জনের জায়গায় ৭ জন থাকার ব্যবস্থা করার ঘটনাটি ছাত্রীদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে হলে কয়েক ঘণ্টা বিক্ষোভের পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণের মধ্যে উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বাসা থেকে বেরিয়ে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় ছাত্রীরা উপাচার্যকে বলেন, তাঁদের হলে আবাসন-সংকট তীব্র, পাঠকক্ষে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ফলে অনেককে কক্ষেই পড়াশোনা করতে হয়। আলাদা রান্নাঘর না থাকায় রান্নাও করতে হয় কক্ষেই। সে জন্য তাঁরা কিছুদিন আগে এক কক্ষে ৬ জনের বেশি ছাত্রীকে আসন না দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। সেই দাবি তখন মেনে নিলেও এখন আবার শীতকালীন ছুটির সুযোগে প্রতিটি কক্ষে আরও একজন করে ছাত্রীকে আসন দেওয়া হচ্ছে। কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের অনেকে এসব কক্ষে আসন পেলেও দীর্ঘদিন ধরে গণরুমে থাকা জ্যেষ্ঠ ছাত্রীদের অনেককে এখনো আসন দেওয়া হয়নি ৷

ছাত্রীরা উপাচার্যকে আরও বলেন, হল প্রশাসনের কাছে আসনের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। আসন কেটে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অভিভাবককে ফোন করে বিচার দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। ছাত্রীরা বলেন, তাঁরা হলের সিট সংকটের সমাধান চান, হলে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চান। তাঁদের সঙ্গে হল প্রশাসনের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে বলে দাবি জানান।

ছাত্রীদের কথা শুনে উপাচার্য তাঁদের বলেন, শিগগিরই তিনি ছাত্রীদের প্রতিনিধি ও হল প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ডেকে কথা বলবেন। অভাব-অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সমাধানটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন। ছাত্রীরা এর জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার দাবি করলে উপাচার্য এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ডেকে কথা বলার আশ্বাস দেন। শেষে আশ্বস্ত ছাত্রীরা উপাচার্যের সঙ্গে সেলফি তোলেন। এরপর তাঁরা হল প্রশাসনের শিক্ষকদের সঙ্গে হলে ফিরে যান। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ১টা ৩৫ মিনিট।

উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের হলে নানাবিধ সমস্যা আছে। হলটির বর্ধিত ভবনটি জরাজীর্ণ। এই হলে শিক্ষার্থীর ঘনত্বও বেশি। এ বছর থেকে হলটিতে নতুন করে ছাত্রীদের সংযুক্তি দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। ঘনত্ব কমলে ছাত্রীদের আর অভিযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্রীরা যেসব দাবি তুলেছে, তার অনেকগুলো আমার কাছে ন্যায্য মনে হয়েছে। সেগুলো আমরা বসে সমাধান করব।’