অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শাহ্‌নাজ মুন্নী

গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শাহ্‌নাজ মুন্নীর হাতে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক
ছবি: প্রথম আলো

সাহিত্যে গভীর জীবনদর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়ে আর ভিন্ন ধারা সৃষ্টি করে এবার ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৪২৯’ পেলেন কবি, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক শাহ্‌নাজ মুন্নী। তাঁর অগ্রজ, অনুজ কথাসাহিত্যিকদের মতে, ৩০ বছরের সাহিত্যচর্চায় শাহ্‌নাজ মুন্নী তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। নারীবাদের ক্ষেত্রে পুরুষকে নারীর প্রতিপক্ষ না করে সমকক্ষ হিসেবে হাজির করেছেন।

গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আজ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার। রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পাক্ষিক অনন্যা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বাংলা ১৪০১ সনে (১৯৯৩ সাল) ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর একজন কৃতী নারী সাহিত্যিক অথবা সাহিত্য–গবেষককে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, শাহ্‌নাজ মুন্নী তাঁর কবিতায় ক্রুদ্ধ এক অন্ধকারের গল্প বলেছেন, হেঁটেছেন হৃদয়ঘরের বারান্দায়। কলমের মাধ্যমে সৃষ্টি করেছেন নতুন ভুবন। এই বিশাল পথে তাঁর সঙ্গী শুধু শব্দ। এ পর্যন্ত শাহ্‌নাজ মুন্নীর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘এলো ক্রুদ্ধ অন্ধকার’, ‘বাদুর ও ব্র্যান্ডি’, ‘তৃতীয় ঘণ্টা পড়ার আগেই’, ‘পান সুন্দরী’, ‘নির্বাচিত গল্প’, ‘আমি আর আমিন যখন আজিমপুর থাকতাম’। এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ পাচ্ছে উপন্যাস ‘স্নানের শব্দ’।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। তিনি বলেন, অন্যন্যা সাহিত্য পুরস্কার নারী সাহিত্যিকদের অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিচ্ছে। একজন নারীর সাহিত্যিক হওয়ার পেছনে অনেক দুঃখ–কষ্ট থাকে। সংসারের প্রাত্যহিক অনেক কাজ ‘দক্ষতার’ সঙ্গে করতে না পারার কারণে অনেক সময় তাঁরা সমাদৃত হতে পারেন না। শাহ্‌নাজ মুন্নী সাহিত্যজগতে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছেন। তাঁর জীবনদর্শন অনেক গভীর। তিনি তিলে তিলে নিজেকে কবি ও কথাসাহিত্যিক হিসেবে তৈরি করেছেন। শাহ্‌নাজের সাহিত্য পড়ে তিনি নিজে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কথাসাহিত্যিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হামীম কামরুল হক বলেন, নারী তাঁর স্বতন্ত্র সত্ত্বা নিয়ে চলেন। নারীর দেখা পৃথিবী, অস্তিত্ব তাঁর কর্মে হাজির হয়। একটি মানুষকে সামগ্রিকভাবে দেখার যে ক্ষমতা, তা নারীর থাকে; একজন পুরুষ তা পারেন না। নারীবাদের চর্চায় পুরুষকে কখনো কখনো তীব্র প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির করা হয়। শাহ্‌নাজ মুন্নী নারীবাদের চর্চায় পুরুষকে সমকক্ষ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, এই সময়ের জটিল আবর্ত শাহ্‌নাজ মুন্নীর লেখায় সহজভাবে উঠে আসে। তাঁর লেখায় গভীর আন্তরিকতা। তিনি একজন লেখকের সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শাহ্‌নাজ মুন্নী বলেন, সাহিত্যে এটা তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক পুরস্কার। তবে দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও অনুপ্রেরণার অনেক অনানুষ্ঠানিক পুরস্কার জমেছে তাঁর। বাংলাদেশের নারীদের অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলতে হয়, সামাজিক সব দায়িত্ব ও কর্তব্য নারীর ওপর চাপানো হয়। সেসব পালন করে একজন নারী সাহিত্যচর্চায় অংশ নিতে পারেন। শাহ্‌নাজ মুন্নী জানান, তিনি লেখার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পান। সাহিত্যচর্চা তিনি আজীবন চালিয়ে যেতে চান।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, ভালো মনের চর্চায় বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেকে এখন শুধু দেখতে চান, পড়তে চান না। ছাপার জগতকে বিরাট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনন্যার কার্যালয়ও আগের জায়গায় নেই। ছাপা সাময়িকীর বদলে অনন্যা চলে এসেছে অনলাইনে। পরিবর্তিত সমাজের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্যও অনেক পড়তে হবে।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন লেখক নূর কামরুন্নাহার। অনুষ্ঠানের শুরুতে আবৃত্তি করেন সাহিনা মিতা এবং গান পরিবেশন করে ‘অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার’–প্রাপ্ত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়েদের দল ‘এফ মাইনর’।