যাঁরা জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন, তাঁদের ছাড়াই পতাকা উত্তোলন দিবস উদ্‌যাপন

ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবসে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান
ছবি: প্রথম আলো

আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস উদ্‌যাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পতাকা উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত কাউকে এই দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, দেশের ইতিহাসচর্চা ও ইতিহাসের অকাট্য দলিল নতুন প্রজন্মের মধ্যে জীবন্ত রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন দিবস উদ্‌যাপন অব্যাহত থাকবে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বটতলায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে ‘পতাকা উত্তোলন দিবস ২০২৩’ শীর্ষক আলোচনা সভা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৎকালীন ছাত্রনেতারা ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনসংলগ্ন ঐতিহাসিক বটতলায় মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। একটি জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গৌরবগাথা ও অবদান বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত।

দেশের ইতিহাসচর্চা ও ইতিহাসের অকাট্য দলিল নতুন প্রজন্মের মধ্যে জীবন্ত রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন দিবস উদ্‌যাপন অব্যাহত থাকবে বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে বিষয়ই অধ্যয়ন করুক না কেন, তাঁদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শ, ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ ও জাতির গৌরবগাথা এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মহৎ অর্জন সম্পর্কে জানতে হবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা৷ কলা অনুষদের ডিন আবদুল বাছির অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন৷ রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷ সংগীত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন৷ আলোচনা পর্ব শেষে সংগীত ও নৃত্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন৷

আমন্ত্রণ পাননি পতাকা উত্তোলনকারীরা

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক ছাত্র সমাবেশে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতারা। সেই পতাকায় সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্তে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র। স্বাধীনতার পর মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ ও রং নির্ধারণ করা হয়। সেটিই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার বর্তমান রূপ। ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি এই পতাকা সরকারিভাবে অনুমোদিত হয়।

ঐতিহাসিক এই পতাকা উত্তোলন দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে আমন্ত্রণ পাননি উত্তোলকদের কেউই। বিগত বছরগুলোতেও এই আয়োজনে তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবরই যুক্তি দিয়ে এসেছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজের মতো করেই পতাকা উত্তোলন দিবসটি পালন করে থাকে। তাই এই দিবসের অনুষ্ঠানে বাইরে থেকে অতিথি আনা হয় না।